হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন - হজের ফরয-ওয়াজিব

হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি হজের বিধান এবং হজ-উমরার সংজ্ঞা। এছাড়া আরও আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন


প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। আর প্রয়োজনীয় মুহূর্তের জ্ঞান অর্জন করা বিশেষভাবে ফরয। ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত ইসলামী বিধি-বিধান জানা ফরয। কৃষকের জন্য কৃষি সংক্রান্ত ইসলামের যাবতীয় নির্দেশনা জানা ফরয। তেমনি ইবাদতের ক্ষেত্রেও সালাত কায়েমকারির জন্য সালাতের যাবতীয় মাসআলা জানা ফরয। 

হজ পালনকারির জন্য হজ সংক্রান্ত যাবতীয় মাসআলা জানা ফরয। প্রচুর অর্থ ব্যয় ও শারীরিক কষ্ট সহ্য করে হজ থেকে ফেরার পর যদি আলেমের কাছে গিয়ে বলতে হয়, 'আমি এই ভুল করেছি, দেখুন তো কোন পথ করা যায় কি-না', তবে তা দুঃখজনক বৈ কি। অথচ তার ওপর ফরয ছিল, হজের সফরের পূর্বেই এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। ইমাম বুখারী রহ. তাঁর রচিত সহীহ গ্রন্থের একটি পরিচ্ছেদ-শিরোনাম করেছেন এভাবে-

باب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ لِقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى : {فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

"এ অধ্যায় 'কথা ও কাজের আগে জ্ঞান অর্জন বিষয়ে'; কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'সুতরাং তুমি 'জান' যে, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই)।”
ইমাম বুখারী রহ. এখানে কথা ও কাজের আগে ইলম তথা জ্ঞানকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

«لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ»

'তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ ও উমরার বিধি-বিধান শিখে নাও।' (মুসলিম: ১২৯৭)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হজ ও উমরা পালনের আগেই হজ সংক্রান্ত যাবতীয় আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, হজ-উমরা পালনকারী প্রত্যেক নর-নারীর জন্য যথাযথভাবে হজ ও উমরার বিষয়াদি জানা ফরয। 
হজ ও উমরা পালনের বিধি-বিধান জানার পাশাপাশি প্রত্যেক হজ ও উমরাকারীকে অতি গুরুত্বের সাথে হজ ও উমরার শিক্ষণীয় দিকগুলো অধ্যয়ন ও অনুধাবন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের সফরে বা হজের দিনগুলোতে কিভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন, উম্মত ও পরিবার-পরিজন এবং স্বজনদের সাথে উঠাবসায় কী ধরনের আচার-আচরণ করেছেন তা রপ্ত করতে হবে। 

বলাবাহুল্য যে এ বিষয়টির অধ্যয়ন, অনুধাবন ও রপ্তকরণ হজ-উমরার তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে হজ-উমরার বিধি-বিধান জানা, এর শিক্ষণীয় দিকগুলো অনুধাবন করা এবং সহীহভাবে হজ-উমরা পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

হজ-উমরার সংজ্ঞা

হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব
হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা।' শরীয়তের পরিভাষায় হজ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়, নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্ট কিছু কর্ম সম্পাদন করা।
উমরার আভিধানিক অর্থঃ যিয়ারত করা। শরীয়তের পরিভাষায় উমরা অর্থ, নির্দিষ্ট কিছু কর্ম অর্থাৎ ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করার মাধ্যমে বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করা।

হজের বিধান


১. হজ ইসলামের পাঁচ রুকন বা স্তম্ভের অন্যতম, যা আল্লাহ তা'আলা সামর্থ্যবান মানুষের ওপর ফরয করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَلَمِينَ 

'এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহ্র হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।' (সূরা ৩; আলে ইমরান ৯৭)
ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

بنِي الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ

'ইসলামের ভিত রাখা হয়েছে পাঁচটি বস্তুর ওপরঃ এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; সালাত কায়েম করা; যাকাত প্রদান করা; হজ করা এবং রমযানের সিয়াম পালন করা।' (বুখারী: ০৮; মুসলিম: ৬১)
সুতরাং হজ ফরয হওয়ার বিধান কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত।
২. হজ সামর্থবান ব্যক্তির ওপর সারা জীবনে একবার ফরয। ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الحَجَّ فَقَامَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ : أَفِي كُلِّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : لَوْ قُلْتُهَا لَوَجَبَتْ ، وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا ، وَلَمْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْمَلُوا بِهَا الْحُجُ مَرَّةً فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعُ

'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, 'হে লোক সকল, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর হজ ফরয করেছেন।' তখন আকরা' ইবন হাবিস (রা) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, প্রত্যেক বছর? তিনি বললেন, 'আমি বললে অবশ্যই তা ফরয হয়ে যাবে। আর যদি ফরয হয়ে যায়, তবে তোমরা তার ওপর আমল করবে না এবং তোমরা তার ওপর আমল করতে সক্ষমও হবে না। হজ একবার ফরয। যে অতিরিক্ত আদায় করবে, সেটা হবে নফল।' (মুসনাদে আহমদ: ২৩০৪; আবু দাউদ: ১৭২১; ইবন মাজাহ্: ২৮৮৬, অনুরূপ মুসলিম: ১৩৩৭)

৩. সক্ষম ব্যক্তির ওপর বিলম্ব না করে হজ করা জরুরী। কালক্ষেপণ করা মোটেই উচিত নয়। এটা মূলত শিথিলতা ও সময়ের অপচয় মাত্র। ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ - يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ - فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَا يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ

'তোমরা বিলম্ব না করে ফরয হজ আদায় কর। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ তার সামনে আসবে।' (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭; অনুরূপ ইবন মাজাহ্: ২৮৮৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ أَرَادَ الْحَقِّ فَلْيَتَعَجَّلْ فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ 

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন,

لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إِلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوا كُلَّ مَنْ لَهُ جَدَةً وَلَمْ يَحُجَّ فَيَضْرِبُوا عَلَيْهِ الْجِزْيَةَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ

'আমার ইচ্ছা হয়, এসব শহরে আমি লোক প্রেরণ করি, তারা যেন দেখে কে সামর্থ্যবান হওয়ার পরও হজ করেনি। অতপর তারা তার ওপর জিযিয়া আরোপ করবে। কারণ, তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়।' (ইবন হাজার, আত-তালখীসুল হাবীর- ২/২২৩)
উমর (রা) আরো বলেন,

لِيَمُتْ يَهُودِيًا أَوْ نَصْرَانِيًّا - يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ رَجُلٌ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ وَوَجَدَ لِذَلِكَ سَعَةً

'ইহুদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে তিনি কথাটি তিনবার বললেন- সেই ব্যক্তি যে আর্থিক স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও হজ না করে মারা গেল।'
(বাইহাকী: ৮৪৪৪, অনুরূপ, ইবনে আবী শাইবাহ: ১৪৪৫৫; আবু নু'আইম ফিল হিলইয়াহ- ৯/২৫২)

হজের ফরয-ওয়াজিব

হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব
হজের ফরযসমূহঃ
১. ইহরাম তথা হজের নিয়ত করা। হজের নিয়ত না করবল না তার হজ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

'নিশ্চয় আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়ত করে।' (বুখারী: ১)
২. উকূফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

»الْحُجَّ عَرَفَةُ«

'হজ হচ্ছে আরাফা'। (নাসাঈ: ৩০১৬, তিরমিযী: ৮৮৯, ইবনে মাজাহ: ৩০১৫)
৩. তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারা (বাইতুল্লাহ্ ফরয তাওয়াফ)। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
'আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।' (সূরা ২২; হাজ্জ ২৯) সাফিয়্যা (রা) যখন ঋতুবতী হলেন, তখন নবীজী বললেন, 'সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে? আয়েশা (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সে তো ইফাযা অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেছে। তাওয়াফে ইফাযার পর সে ঋতুবতী হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তাহলে এখন যাত্রা কর।' এ থেকে বুঝা যায়, তাওয়াফে ইফাযা ফরয।
৪. সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা। অধিকাংশ সাহাবী, তাবিঈ ও ইমামের মতে এটা ফরয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

اسْعَوْا فَإِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْيِ

'তোমরা সাঈ কর, কেননা আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর সাঈ ফরয করেছেন।' (মুসনাদে আহমদ: ২৭৩৬৭, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ২৭৬৪) আয়েশা (রা) বলেন,

فَلَعَمْرِي مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ مَنْ لَمْ يَطْفُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ

'আমার জীবনের কসম! আল্লাহ কখনো সে ব্যক্তির হজ পরিপূর্ণ করবেন না যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে না।' (মুসলিম: ১২৭৭)
মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি কোনো একটি ফরয ছেড়ে দেবে, তার হজ হবে না।

হজের ওয়াজিবসমূহ

হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব
১. মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ মীকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম বাঁধা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাতগুলো নির্ধারণ করার সময় বলেন,

هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةِ

'এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্যও।' (বুখারী: ১৫২৪; মুসলিম: ১১৮১)

২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা। যে ব্যক্তি আরাফার ময়দানে দিনে উকুফ করবে, তার ওপর ওয়াজিব হচ্ছে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে দিনে উকুফ করেছেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন। মিসওয়ার ইবন মাখরামা (রা) বলেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় আমাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করার সময় বললেন, মুশরিক ও পৌত্তলিকরা সূর্যাস্তের সময় এখান থেকে প্রস্থান করত, যখন সূর্য পাহাড়ের মাথায় পুরুষের মাথায় পাগড়ির মতই অবস্থান করত। অতএব আমাদের আদর্শ তাদের আদর্শ থেকে ভিন্ন'। সুতরাং সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রস্থান মুশরিকদের রীতি থেকে ভিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছিল।
৩. মুযদালিফায় রাত যাপন।
ক. কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় রাত যাপন করেছেন। তিনি বলেছেন,

لِتَأْخُذْ أُمَّتِي نُسُكَهَا ، فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَلْقَاهُمْ بَعْدَ عَامِي هَذَا

'আমার উম্মত যেন হজের বিধান শিখে নেয়। কারণ আমি জানি না, এ বছরের পর সম্ভবত তাদের সাথে আমার আর সাক্ষাত হবে না।' (মুসনাদে আহমাদ: ১৪৯৪৬, ইবনে মাজাহ: ৩০২৩)
খ. তিনি অর্ধরাতের পর দুর্বলদেরকে মুযদালিফা প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায়, মুযদালিফায় রাত যাপন ওয়াজিব। কারণ অনুমতি তখনই প্রয়োজন হয় যখন বিষয়টি গুরুত্বের দাবী রাখে।
গ. আল্লাহ তা'আলা মাশ'আরে হারামের নিকট তাঁর যিকর করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفْتِ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ

'সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশ'আরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো।' (সূরা ২; বাকারা ১৯৮)
৪. তাশরীকের রাতগুলো মিনায় যাপন। ১০ তারিখ দিবাগত রাত ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও মিনায় যাপন করতে হবে। ১৩ তারিখ কঙ্কর মেরে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে। আয়েশা (রা) বলেন,

أَفَاضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ حِينَ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مِنَى فَمَكَثَ بِهَا لَيَالِيَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ

'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত মসজিদুল হারামে আদায় ও তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে মিনায় ফিরে এসেছেন এবং তাশরীকের রাতগুলো মিনায় কাটিয়েছেন।' (আবু দাউদ: ১৯৭৩)
হাজীদের যমযমের পানি পান করানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিনার রাতগুলো মক্কাতে যাপনের অনুমতি দিয়েছেন এবং উটের দায়িত্বশীলদের মিনার বাইরে রাতযাপনের অনুমতি দিয়েছেন। এই অনুমতি প্রদান থেকে প্রতীয়মান হয়, মিনার রাতগুলোতে মিনাতে যাপন করা ওয়াজিব।

৫. জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। ১০ যিলহজ জামরাতুল আকাবায় (বড় জমারায়) কঙ্কর নিক্ষেপ করা। তাশরীকের দিনসমূহ তথা, ১২, ১২ এবং যারা ১৩ তারিখ মিনায় থাকবেন, তাদের জন্য ১৩ তারিখেও। যথাক্রমে ছোট, মধ্য ও বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। জাবের (রা) বলেন,

رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَرْى عَلَى رَاحِلَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ وَيَقُولُ لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلَّى لَا أَحُجُ بَعْدَ حَجَّتِي هَذِهِ

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি কুরবানীর দিন তিনি তাঁর বাহনের ওপর বসে কঙ্কর নিক্ষেপ করছেন এবং বলেছেন, তোমরা তোমাদের হজের বিধান জেনে নাও। কারণ আমি জানি না, সম্ভবত আমার এ হজের পর আমি আর হজ করতে পারব না।' (মুসলিম: ১২৯৭; আবু দাউদ: ১৯৭০)
হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব
৬. মাথা নেড়ে বা চুল ছোট করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার আদেশ দিয়ে বলেন, وَلْيُقْصِرْ ، وَلْيُحِل অর্থাৎ সে যেন মাথার চুল ছোট করে এবং হালাল হয়ে যায়। (বুখারী: ১৬৯১; মুসলিম: ১২২৭)
আর তিনি মাথা মুণ্ডনকারিদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দো'আ করেছেন এবং চুল ছোটকারিদের জন্য একবার মাগফিরাতের দো'আ করেছেন।
৭. বিদায়ী তাওয়াফ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী তাওয়াফের আদেশ দিয়ে বলেন,

لا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ
'বাইতুল্লাহ্র সাথে তার শেষ সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন না যায়।' (মুসলিম: ১৩২৭)
ইবন আব্বাস (রা) বলেন,

أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلَّا أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ

'লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহ্র সাক্ষাত। তবে তিনি ঋতুবতী মহিলার জন্য ছাড় দিয়েছেন।' (মুসলিম: ১৩২৮)
উল্লেখ্য, যে এসবের একটিও ছেড়ে দেবে, তার ওপর দম ওয়াজিব হবে অর্থাৎ একটি পশু যবেহ করতে হবে। ইবন আব্বাস (রা) বলেন,

مَنْ نَسِيَ شَيْئًا مِنْ نُسُكِهِ أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقُ دَمًا

'যে ব্যক্তি তার হজের কোন কাজ করতে ভুলে যায় অথবা ছেড়ে দেয় সে যেন একটি পশু যবেহ করে।' (মুআত্তা মালেক: ১৮৮; দারাকুতনী: ২৫৩৪)

আশা করি হজ-উমরার বিধি-নিষেধ জানা ওয়াজিব কেন এবং হজের ফরয-ওয়াজিব এ সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম মত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন