বিভিন্ন সময়ের দোয়া ও জিকির সংক্রান্ত আলোচনা
বিভিন্ন সময়ের দোয়া ও জিকির সংক্রান্ত আলোচনা। এখানে যে দোয়া উল্লেখ করা হবে এগুলো বিভিন্ন সময় ও আকস্মিক বিষয়ে পড়বে।
মসিবতের সময় যে দুআ পড়বে / সকল বিপদ মসিবত থেকে মুক্তির দোয়া দরুদ
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত ওয়াসাল্লাম বিপদাপদে এ দুআ পড়তেন- আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ العَرْشِ العَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ ي السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ وَرَبُّ العَرْشِ الكَرِيمِ ال
উচ্চারণঃ লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমূল হালিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযিম, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, যিনি আসমান-জমিনের পালনকর্তা এবং মহান আরশের অধিপতি। অপর বর্ণনায় আছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পেরেশান হতেন বা বিপদের সম্মুখীন হতেন, তখন উক্ত দুআ পড়তেন।'
হযরত আনাস রা. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, কোন বিপদ আসলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ اسْتَغِيْثُ.
উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়্যুম, রি-রাহমাতিকা আস্তাগিস।
অর্থঃ হে শাশ্বত চিরজীবি, আপনার কাছেই ফরিয়াদ করি।'
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তিত হলে আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে এ দুআ পড়তেন-
سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ.
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহিল আজিম।
অর্থঃ মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
খুব বেশি জোরালো দুআ করলে বলতেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম
অর্থঃ হে চিরঞ্জীব, হে সকল কাজের নিয়ন্ত্রক। আপনারই আশ্রয় চাই।১
আরো পড়ুনঃ আজান ও ইকামতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে। জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এতটুকু বেশি আছে যে, আনাস রা. দুআ করতে। চাইলে এ দুআটি করতেন। অন্য কোন দুআ করলেও এটি সঙ্গে করতেন।
হযরত আবদুল্লাহ বিন জাফর রা. এর সূত্রে বর্ণিত আছে হযরত আলি রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ দুআ শিখিয়েছেন এবং বিপদাপদের সময় ও মুসিবতের সময় তা পড়তে আদেশ করেছেন। দুআটি হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْكَرِيمُ الْعَظِيمُ ، سُبْحَانَهُ وَتَبَارَكَ اللهُ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، وَالْحَمْدُ
اللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল কারিমুল আজিম, সুবহানাহু ওয়াতাবারাকাল্লাহ রাব্বুল আরশিল চাচীও বালান কস আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি সম্মানি ও মহান। তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ তাআলা বড় মহান পালনকর্তা। সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য।
আবদুল্লাহ বিন জাফর রা. জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এটা পড়ে ফুঁ দিতেন। আর অনাত্মীয়ের কাছে বিবাহিত মেয়েদেরকে তা শিখিয়ে দিতেন।
হযরত আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিপদের সময়ের দুআ হল-
اللَّهُمَّ رَحْمَتَاكَ أَرْجُو فَلَا تَكَانِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِنَّ أَنتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইনিন। ওয়া আসলিহলি শা'নি কুল্লাহু, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার রহমতের আশাবাদী। অতএব, ক্ষণিকের জন্যও আমার রক্ষণাবেক্ষণ আমার ওপর ছেড়ে দিয়েন না। আমার সকল সমস্যার সমাধান আপনি করে দিন। আপনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই।'
হযরত আসমা বিনতে উমাইস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন দুআ শিক্ষা দেব যেটি তুমি বিপদের সময় পড়বে? তুমি বিপদের সময় এ দুআ পড়বে- আলায়ি
اللهُ اللهُ رَبِّي لَا أُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا
উচ্চারণঃ আল্লাহু আল্লাহু রাব্বি, লা উশরিকু বিহি শাইআ।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহই আমার প্রভু, আমি তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।২
হযরত আবু কাতাদা রা. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি বিপদের সময় আয়াতুল কুরসি ও সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিপদে সাহায্য করবেন।
হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি এমন দুআ জানি যদি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি সেটি পড়ে তার বিপদ দূর হয়ে যায়। দুআটি হল ইউনুস আলাইহিস সালাম অন্ধকারে মাছের পেটে থেকে যে দুআটি করেছিলেন-
لَا إِلَهَ إِنَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জালিমিন।
অর্থঃ আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আপনি পবিত্র। আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।'
ইমাম তিরমিজি উক্ত হাদিসটি হযরত সাদ রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ইউনুস আ. যখন মাছের পেটে ছিলেন, তখন তিনি এই দুআটি করেছিলেন। যে মুসলমান ব্যক্তি কোন বিষয়া এ দুআ পড়বে, আল্লাহ তার দুআ অবশ্যই কবুল করবেন। দুআটি হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জালিমিন।
অর্থঃ আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আপনি পবিত্র। আমি সীমালঙ্ঘন কারীদের। অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। শীত করার ক্যাাণত ভাত ভাষাগারে জীয় সীমায়
ভয় পেলে এ দুআ পড়বে
হযরত সাওবান রা. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কিছু দেখে ভয় পেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-
هُوَ اللهُ اللَّهُ رَبِّي لَا شَرِيكَ لَهُ
উচ্চারণঃ হুয়াল্লাহু, আল্লাহু রাব্বি লা-শারিকালাহ।
অর্থঃ তিনিই আল্লাহ, তিনি আমার প্রভু, তাঁর কোন শরিক নেই। ৩কাত
হযরত আমর বিন শুআইব রা. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে ভয়ের সময় এই কালিমাগুলো পড়তে শিখিয়েছেন-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرْ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
উচ্চারণঃ আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহ। ওয়া মিন হামাজাতিশ শাইয়াতিনি ওয়া আন ইয়াহদুরুন।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পূর্ণ-দৃঢ় উক্তি সমূহের আশ্রয় নিচ্ছি তার ক্রোধ থেকে তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুস্পর্শ ও উপস্থিতি থেকে আবদুল্লাহ বিন আমর রা. তাঁর বুঝমান সন্তানদেরকে এ দুআ মুখস্ত করাতেন।
আরো পড়ুনঃ ঘুমের সময় দুআ
আর অবুঝ বাচ্চাদের গলায় কাগজে লেখে ঝুলিয়ে দিতেন।'
দুঃশ্চিন্তা হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আবু মুসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি দুঃশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে পড়ে যায়, সে যেন এই দুআগুলো পড়ে। তখন উপস্থিত এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই বাক্যগুলো পড়া থেকে যে উদাসীনতা প্রদর্শন করল সে বাস্তবেই ক্ষতিগ্রস্থ। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। অতএব, তোমার এই বাক্যগুলো পড় এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দাও। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে এই বাক্যগুলো বলবে, আল্লাহ তাআলা তার সকল টেনশন দূর করে দিবেন এবং তাকে সুখী করবেন।
اللَّهُمَّ أَنَا عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ ابْنُ أَمَتِكَ فِي قَبْضَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِي حُكْمِكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ نُورَ صَدْرِي، وَرَبيعَ قَلْبِي، وَجَلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনা আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, ফি কাবজাতিকা, নাসিয়াতি বিয়াদিকা, মাজিন ফি হুকমিকা, আদলুন ফিয়্যা কাজাউকা। আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনজালতাহু ফি কিতাবিকা, আও আল্লামতাহু আহাদান মিন খালকিকা, আও ইসতা সারতা বিহি ফি ইলমিল গাইবি ইন্দাকা আন তাজআলাল কুরআনা নুরা সাদরি, ওয়া রাবিআ কালবি, ওয়া যালাআ হুজনি, ওয়া জাহাবা হাম্মি।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার গোলাম, আপনার গোলামের বেটা গোলাম, আপনার বান্দীর সন্তান গোলাম। আমি আপনার নিয়ন্ত্রণে, আমার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। আমার মাঝে চলে আপনার বিধান, আমার বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত ইনসাফপূর্ণ। আপনার সেসব নামের উসিলায় প্রার্থনা করি, যে নামসমূহ আপনি নিজে নিজের জন্য রেখেছেন। অথবা নিজের কিতাবে নাজিল করেছেন, অথবা অন্য কোন সৃষ্টিকে শিখিয়েছেন। অথবা নিজের অদৃশ্যের ভাণ্ডারে তুলে রেখেছেন। কুরআন মাজিদকে আমার আত্মার আলো, হৃদয়ের বসন্ত, দুঃখ নিবরাক ও দুশ্চিন্তা বিদূরক বানিয়ে দিন।২
বিপদে নিপতিত হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আলি রা. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হে আলি, তোমাকে কি এমন কথা শিক্ষা দেব যা তুমি সর্বনাশায় নিপতিত হলে পড়বে? আমি বললাম, জি, অবশ্যই শিখিয়ে দিন। আল্লাহ আমাকে আপনার তরে উৎসর্গীত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন সর্বনাশায় নিপতিত হবে, তখন এ দৃষ্টা পড়বে। এই দুআ পড়লে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রকার বিপদাপদ দূর করে দিবেন। দুআটি হল-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَلَا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, ওয়া লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়ি্যল আজিম কচিয়ে
অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ, বড় করুণাময়। মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই।'
শত্রুদের মুখোমুখি হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আনাস রা. এর সূত্রে বর্ণিত, এক যুদ্ধে আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। শত্রুদের মুখোমুখি হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই দুআ পড়তে শুনেছি। এরপর আমি শত্রুদেরকে ধরাশায়ী হতে দেখেছি। তাদের সামনে-পেছনে ফেরেশতারা আঘাত করছিলেন। দুআটি হল-
يَا مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ أَعْبُدُ وَإِيَّاكَ أَسْتَعِينُ.
উচ্চারণঃ ইয়া মালিকি ইয়াউমিদ্দিন, ইয়্যাকা আবুদু ওয়া ইয়্যাকা আসতায়িন।
অর্থঃ হে বিচার দিবসের মালিক, আমি আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই।২
পূর্বের বর্ণিত হযরত আবু মুসা আশআরি রা. এর দুআটিও পড়া যায়।
শয়তানের কুমন্ত্রণায় প্ররোচিত হলে এ দুআ পড়বে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থঃ যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে। তিনি সবকিছু শুনেন, জানেন।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- মোজাপতি
وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْأُخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا
অর্থঃ তুমি যখন কুরআন তিলাওয়াত করো, তখন তোমার ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা ঢেলে দিই।'
তাই আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চেয়ে কুরআনে কারিমের যতটুকু অংশ পড়া যায়, ততটুকু পড়া।
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নামাজের জন্য দাঁড়ালেন। তখন তাকে তিনবার বলতে শুনলাম- (আউজুবিল্লাহি মিনকা): আমি তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর পানাহ চাই এরপর তিনি তিনবার বললেন, (আলআনুকা বি- লানাতিল্লাহ) আমি তোমাকে আল্লাহর নামে অভিশম্পাত করছি)।
অতঃপর তিনি দুই হাত প্রসারিত করলেন, যেন তিনি কিছু ধরতে চাচ্ছেন। নামাজ শেষ হলে আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা আজ নামাজে আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা ইতিপূর্বে শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলিশ উল্কাপিণ্ড নিয়ে আমার মুখে মারার জন্য এসেছিল। তখন আমি (আউজুবিল্লাহি মিনকা) তিনবার পড়লাম।
এরপর (আলআনুকা বি-লানাতিল্লাহ) তিন বার পড়লাম, এরপর আমি তাকে ধরার মনস্থ করলাম। আল্লাহর কসম! যদি আমার ভাই সুলাইমানের দুআ না থাকত, তাহলে তাকে বেঁধে রাখতাম, আর মদিনার ছেলেরা তাকে নিয়ে খেলা করত।
দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- দুর্বল মুমিন থেকে পরকালের ব্যাপারে শক্তিশালী মুমিন শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে প্রিয়। প্রত্যেকের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে। তোমরা উপকারী বস্তু অর্জন করতে সামনে চলো। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। অক্ষমতা প্রকাশ করো না। কোন বিপদের সম্মুখীন হলে এ কথা বলো না- যদি মমি এরূপ করতাম, তাহলে এরূপ হতো। বরং বলো, আল্লাহ তাআলা সবকিছু চূড়ান্ত করে রেখেছেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। কারণ, যদি শব্দটি ধ্যাতানের প্রতারণার দরজা খুলে দেয়।'
হযরত আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ব্যক্তির মাঝে কোন ব্যাপারে সমাধান করে দিলেন। যার বিপক্ষে রায় হয়েছে তিনি ফিরে যাওয়ার সময় বললেন- (হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল) আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনি আমার উত্তম অভিভাবক নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ আলা অপারগতাকে ভর্ৎসনা করেন। তবে তুমি বুদ্ধিমত্ত্বার সাথে চলো। কোন ব্যাপারে পরাজিত হলে বলো- (হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল) হাল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনি আমার উত্তম অভিভাবক।২
কোন বিষয় অসাধ্য হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আনাস রা. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ لَا سَهْلَ إِلَّا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً، وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلاً
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা যাআলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হাজানা ইযা শি'তা সাহলা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি সহজ না করলে কোন কিছুই সহজ নয়। আর আপনি চাইলে দুঃচিন্তার বিষয়ও সহজ করে দিতে পারেন।
উপার্জন করা কঠিন হলে করণীয়
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রা. এর সূত্রে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো যদি জীবিকা নির্বাহ ক হয়ে যায়, তাহলে সে যেন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দুআটি পড়ে বের হয়-
بسْمِ اللهِ عَلَى نَفْسِي وَمَالِي وَدِينِي اللَّهُمَّ رَضْنِي بِقَضَائِكَ وَبَارِكْ لِي فِيْمَا قُدْرَ لِي حَتَّى لَا أُحِبُّ تَعْجِيلَ مَا أُخِرْتَ وَلَا تَأْخِيرَ مَا عَجَلْتَ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আলা নাফসি ওয়া মালি ওয়া দীনি, আল্লাহুম্মা রাদ্দিনি বি কাজায়িকা, ওরা বারিক লি ফিমা কুদ্দিরা লি হাত্তা লা উহিব্বা তাজিলা মা উখখিরতা ওয়ালা তাখিরাম আজ্জালতা।
অর্থঃ নিজের আত্মার ওপর, সম্পদের ওপর এবং ধর্মের ওপর আল্লাহর নাম নিলাম।। আল্লাহ, আপনার ফয়সালার ওপর আমাকে তুষ্ট করুন এবং ভাগ্যে নির্ধারিত বস্তুঃ। বরকত দান করুন। যাতে বিলম্বিত বিষয়ে তাড়াহুড়া পছন্দ না করি এবং ত্বরান্বিত বিষয়ে বিলম্বিতকরণ পছন্দ না করি।'
বিপদাপদ থেকে মুক্তির দুআ
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তাআলা বান্দার পরিবারে, মালে, সন্তানাদিতে যে বরকত দিবেন, এর প্রেক্ষিতে যদি বান্দা এই দুআ পড়ে, তাহলে এগুলোতে মৃত্যু ছাড় আর কোন বিপদাপদ দেখতে পাবে না। দুআটি হল-
مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
উচ্চারণঃ মাশাআল্লাহু লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থঃ আল্লাহ পাক যা ইচ্ছা করেন তা হয়, আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই।'
দুর্ঘটনায় পতিত হলে এ দুআ পড়বে
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَبَشِّرِ الصُّبِرِينَ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ أُولَئِكَ
عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
অর্থঃ সুসংবাদ দাও সবরকারীদেরকে। তারা ঐ সব লোক, যারা বিপদে পতিত হলে বলে: নিশ্চয় আমরা আল্লাহর মালিকানাধীন এবং নিশ্চয় আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এ সমস্ত লোকদের প্রতিই রয়েছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অফুরন্ত অনুগ্রহ ও বিশেষ রহমত। আর এ সব লোকই হেদায়াত প্রাপ্ত।
হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা সকল দুর্ঘটনায় ইন্নালিল্লাহ বলবে। এমনকি জুতার ফিতা ছিড়ে গেলেও। কেননা এটাও একটি মুসিবত ও দুর্ঘটনা।'
ঋণী হলে এ দুআ পড়বে
হযরত আলি রা. এর সূত্রে বর্ণিত- এক চুক্তিকৃত গোলাম তার কাছে এসে বললো, আমি চুক্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়েছেন, সেগুলো আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব, পাহাড় পরিমাণ ঋণ হলেও তা আদায় হয়ে যাবে। তুমি এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ الْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম-মান সিওয়াক।
অর্থঃ হে আল্লাহ, হালাল বস্তু দ্বারা আমার প্রয়োজন পূরা করে দিন, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নিজ অনুগ্রহে আমাকে আপনি ছাড়া সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষি করে দিন।