গোলাপ গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় - গোলাপ গাছের চোখ কলম
গোলাপ গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এবং গোলাপের চোখ কলম সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
দ্রুত ফলনশীল গাঁদা ফুলের চাষএই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি গোলাপের শাখা কলম এবং গোলাপ গাছের রোগ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ ফুলের চাষ
গোলাপ এক ধরনের ফুল। Rosaceae পরিবারের Rosa গোত্রের এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় গাছে গোলাপ ফুল ফুটে থাকে। প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রয়েছে।
গোলাপ গাছের কান্ডে কাঁটা থাকে। এর পাতার কিনারাতেও ক্ষুদ্র কাঁটা রয়েছে। গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশে। অল্প কিছু প্রজাতির আদি বাস ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও উত্তম পশ্চিম আফ্রিকা মহাদেশে। ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য গোলাপ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ
- হাইব্রিড টি গোলাপ (Hybrid Tea Roses): এ প্রজাতির গোলাপ বড় এবং সিঙ্গেল স্টেমে জন্মায়।ফ্লোরিবুন্ডা গোলাপ (Floribunda Roses): ছোট ছোট ফুলের গ্রুপে জন্মায়।
- গ্র্যান্ডিফ্লোরা গোলাপ (Grandiflora Roses): হাইব্রিড টি এবং ফ্লোরিবুন্ডার সংমিশ্রণ।
- মিনি গোলাপ (Miniature Roses): ছোট আকারের গোলাপ, যা কন্টেইনারে ভালো জন্মায়।
- ক্লাইম্বিং গোলাপ (Climbing Roses): এই প্রজাতির গোলাপ গাছের মতো বেড়ে ওঠে এবং কোনো কাঠামোতে আরোহন করতে পারে।
- শ্রাব গোলাপ (Shrub Roses): বড় ঝোপের মতো হয় এবং বিভিন্ন আকৃতির হয়।
গোলাপ গাছের চারা সংগ্রহ
বিভিন্ন জাতের এবং ধরনের চারা কিনতে পাওয়া যায় স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের নার্সারিতে। ছোট থেকে মাঝারি সাইজের যে কোন নার্সারিতে গোলাপের চারা কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া উন্নত মানের গোলাপ গাছের শাখা কলম তৈরি করেও গোলাপ গাছের বংশবৃদ্ধি করা যেতে পারে।
গোলাপ গাছের শাখা কলম
শাখা কলমের দ্বারা অনায়াসে প্রায় সকল প্রকার দেশী গোলাপের চারা তৈরি করা যায়। সাধারণত নভেম্বর মাসে যখন গোলাপ গাছ ছাঁটাই করা হয তখন গোলাপের শাখা কলম করা হয়। মার্চ মাস নাগাদ শাখা কলমগুলো নতুন গোলাপ গাছ হিসেবে রোপনের উপযোগি হয়। চোখ কলম করার জন্য যে শাখঅ কলম করা হবে তা বর্ষাকালে রোপন করতে হবে।
তাতে শিকড় এলে সেগুলো তুলে আট ইঞ্চি দূরে দূরে জমিতে লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং গাছ এই জামিতে লেগে গেলে ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে চোখ কলম করা হয়। শিকড় গজানোর পর শাখা কলমগুলো ৫ ইঞ্চি টবে বা পলিব্যাগেও স্থানান্তর করা যেতে পারে। শাখা কলম তৈরির জন্য এক বছরবয়স্ক শক্ত ও নিখুঁত শাখা নির্বাচন করা প্রয়োজন।
শাখার যে অংশ মাটিতে পোঁতা হবে, তাকে ধারাল ছুরি দিয়ে তেরছা করে কাটতে হয় এবং উপরের অংশ সমতল বা সোজাভাবে কাটতে হয়। সমপরিমাণ বালি, পলি ও পাতা পচা সার মিশ্রণে ১৫-২২ সেমি. লম্বা শাখাগুলো পুঁতে নিয়মিত পানি দিতে হয়। শাখা কলমের কাটিংটিতে মোট তিনটি কুঁড়ি রাখতে হবে। তারপর, শাখাগুলো কাত করে এমনভাবে পুঁততে হবে যেন ২/৩ অংশ মাটিরমধ্যে থাকে।
রোপনের পূর্বে কর্তিত শাখার গোড়ার দিক সোরাডিক্স-বি দ্রবণে ডুবিয়ে নিলে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। শুধু লিলে বালিতেও শাখা রোপন করা চলে, তবে এর অসুবিধা এই যে, শাখঅয় শিকড় গজাবার পর যথাশীঘ্র স্থানান্তরিত না করলে খাদ্যের অভাবে চারাগুলো মরে যেতে পারে। সিলেট-বালি টবে ভর্তি করে শাখা রোপনের পর বাস্পমোচন হ্রাসের জন্য কাঁচের বেলাজর দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। নতুবা শাখার মাথায় কিছু কাঁচা গোবর সার দিলেও চলে। বালিতে দিনে ৩-৪ বার ঝরনার সাহায্যে পানি দিয়ে বালি ভেজা রাখতে হবে। শিকড় গজানো পর্যন্ত টবটি ছায়ায় রাখলে ভাল হয়।
গোলাপ গাছের চোখ কলম
চোখ কলম করতে হলে একটি মুলসহ গাছের প্রয়োজন। যাকে রুট স্টক বলে। রোজ-এডওয়ার্ড, গ্রান্ট রোজ, জংলি গোলাপ, কাট গোলাপ প্রভৃতি অরণ্যজাত ও কষ্টসহিষ্ণু গোলাপের গাছ রুট স্টক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিম্নোক্ত উপায়ে রুট স্টক উৎপন্ন করা যেতে পারে।
গোলাপ গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়
গোলাপ গাছে আমরা বিভিন্নভাবে পরিচর্যা করে থাকি। এ গোলাপ গাছ পরিচর্যা করতে আমরা ভালো গোলাপ ফুল পেতে হলে আমরা বিভিন্ন ধরনের কলম করে থাকি। বর্ষাকালে একখন্ড সমতল ও উর্বর জমিতে কতকগুলো শাখা কলম রোপন করতে হবে। শাখা কলমের দৈর্ঘ্য এক ফুট বা ৩০ সেমি-র মত হবে।
শাখা কলমের নীচের দিকে একটি কুঁড়ি ও উপরের দিকে দুইটি কুঁড়ি রেখে অবশিষ্টগুলি তুলে ফেলতে হবে। তারপর কলমগুলো কাত করে এমনভাবে পুঁততে হবে যেন ২/৩ অংশ মাটির মধ্যে থাকে এবং মাত্র একটি কুঁড়ি উপরে থাকে। এইভাবে যে গাছ উৎপন্ন হলো, তা আগামী ফেব্রুয়রি মাসে রুট স্টক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
গোলাপ গাছের বৃদ্ধির প্রয়োজন অনুসারে সময়সময় সার দিতে হবে। এজন্য গাছ ছাটাইয়ের ১০/১২ দিন আগে অর্থাৎ মধ্য আশ্বিনে একবার এবং শীতের শেষে ফাল্গুন মাসে আরেকবার গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। গাছ প্রতি ২/৩ কেজি পচা শুকনো গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।
টবের বা বেডের উপরের ১০ সেমি মাটি সরিয়ে নিচের মাটি কিছুটা আলগা করে সারগুলি মাটির সাথে সাবধানে মিশিয়ে দিতে হবে। যাতে শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। গোলাপের জন্য হাঁস-মুরগি বা কবুতরের বিষ্ঠা ভাল সার। গোবর ও সরিষার খৈল ৪/৫ দিন পানিতে ভিজিয়ে তরল করে বর্ষাও শীতকালে সপ্তাহে ২ দিন করে ব্যবহার করা যায়।
ছোট মাছ পচা পানিও তরল সার হিসাবে গাছের গোড়ায় দেওয়া যায়। বড় গোলাপ পাওয়ার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাই করা প্রয়োজন। ফুলের মৌসুমের আগেই অর্থাৎ আশ্বিন (অক্টোর মাসের ১ম/২য় সপ্তাহে) মাসই গাছ ছাটাইয়ের উপযুক্ত সময়। পুরোনো ডাল, ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দিতে হবে যাতে নতুন শাখা ভালভাবে বিস্তৃত হতে পারে। ছাটাইয়ের গাছে ছত্রাক আক্রমন করতে পারে। ডাল ছাটাইয়ের পর ০.৪% বর্দোমিক্সার দিয়ে গাছ ভিজিয়ে দিলে ভাল হবে অথবা কাটা জায়গায় চুন বা আলকাতরার প্রলেপও দেয়া যায়।
গোলাপ গাছের রোগ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত পাতার পানি গোলাপ গাছের ছিটেলে গোলাপ গাছের রোগ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পোকামাকড় দূর করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন। ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে ভাল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
গোলাপ গাছের চারপাশে মালচ ব্যবহার করলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং আগাছা কম হবে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য বছরে ২-৩ বার গভীর সেচ দিন।
সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা করলে আপনার গোলাপ গাছগুলো সুন্দর এবং সুগন্ধি ফুলে ভরে উঠবে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url