কিভাবে গাঁদা ফুল গাছের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়

কিভাবে গাঁদা ফুল গাছের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং গাঁদা ফুলের বীজ বপনের সময় সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি করতে পারেন পড়তে পারেন।
কিভাবে গাঁদা ফুল গাছের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি গাঁদা ফুলের বীজ সংগ্রহ এবং গাঁদা ফুল গাছের পরিচর্যা।এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইল।

দ্রুত ফলনশীল গাঁদা ফুলের চাষ


বাংলাদেশের সর্বত্রই এই ফুলের চাষ হয় বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পর্যাপ্তভাবে চাষ হচ্ছে। এই ফুল সাধারণত উজ্জ্বল হলুদ ও কমলা হলুদ হয়ে তাকে। প্রধানত দুই ধরনের উন্নত জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করা হয়ে থাকে। হলুদ গাঁদা বা আফ্রিকান এবং রক্তগাঁদা বা ফ্রেঞ্চ মেরিগোল্ড। হলুদ গাঁদার গাছ ও ফুল বড় এবং রক্তগাঁদার গাছ ও ফুল ছোট। 

তবে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড গাঁদার জাত আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো বেঁটে জাতের অথচ বড় বড় হলুদ রঙ এর ফুল হয়ে থাকে। এছাড়া কমলা, সাদা, বাসন্তী ইত্যাদি রং এর গাঁদার জাতও আবিষ্কার হয়েছে। গাঁদার জলবায়ু ও মাটি ও পাহাড়ি এলাকা এবং প্রচণ্ড শতি ও প্রচন্ড গরম ছাড়া প্রায় সর্বত্র সকল ঋতুতে এই ফুল চাষ করা যায়। তবে সমতল অঞ্চলে শীতকালে এই ফুল ভাল হয়। এঁটেল বেলে, পলি, দোআঁশ সবরকম মাটিতে এই গাছ জন্মে তবে পানি জমে থাকে ও ছায়াচ্ছন্ন থাকে এমন জায়গায় ভাল হয় না। এর পিএইচ মাত্রা ৬-৭।

গাঁদা ফুলের বীজ বপনের সময়


গাঁদা ফুলের বীজ বপনের উৎপাদন মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ রোপন করার উপযুক্ত সময়। এই সময় সঠিক পদ্ধতিতে বীজ রোপন করার পর চারা তৈরি হলে সেগুলোকে স্বাস্থানে লাগাতে হবে। বীজ বপনের জন্য প্রথমে মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মাটির মিশ্রণে ৬০% বেলে দোআঁশ মাটি, ২০% পচা গোবর এবং ২০% বালু মিশ্রিত করুন। 

ছোট পাত্র বা বীজতলা তৈরি করে মাটির মিশ্রণ ভর্তি করুন। মাটির ওপর বীজগুলো ছড়িয়ে দিন এবং উপরে হালকা মাটি ছিটিয়ে দিন যাতে বীজগুলো ঢেকে যায়। বীজতলায় হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।

গাঁদা ফুলের বীজ সংগ্রহ


গাঁদা ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার পর এবং শুকানোর পর বীজ সংগ্রহ করা হয়। ফুলটি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে, তখন বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হবে। ফুল থেকে বীজ আলাদা করে শুকিয়ে রাখুন।ফুল শুকানোর পর বীজগুলো আলাদা করে পরিষ্কার ও শুকনো জায়গায় রাখুন।

গাঁদা ফুলের বীজ থেকে চারা তৈরি


গাঁদা ফুলের বীজ থেকে চারা তৈরি করার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করলে সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বীজতলা ছায়াযুক্ত এবং আর্দ্র স্থানে রাখুন যাতে সূর্যের সরাসরি আলো না পড়ে। প্রতিদিন হালকা পানি দিন, কিন্তু বেশি পানি দেওয়া যাবে না যাতে মাটি জলাবদ্ধ না হয়। ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজাতে শুরু করবে।

গাঁদা ফুলের চারার পরিচর্যা


চারাগুলো ২-৩ পাতা বের হলে সেগুলোকে একটু একটু করে সরাসরি সূর্যের আলোতে নিয়ে আসুন।চারাগুলো একটু বড় হলে এবং ৪-৬টি পাতা বের হলে এগুলোকে আলাদা করে বড় পাত্রে বা স্থায়ী জায়গায় রোপণ করুন। রোপণের সময় মাটির মিশ্রণ একই রাখুন এবং যথাযথ পানি সরবরাহ করুন। চারাগুলো ৪-৬টি পাতা বের হলে এগুলোকে আলাদা করে বড় পাত্রে বা স্থায়ী জায়গায় রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করুন। 

চারাগুলোকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করুন যাতে পর্যাপ্ত স্থান পাওয়া যায়। সপ্তাহে একবার সার প্রয়োগ করতে পারেন (পচা গোবর বা অন্যান্য জৈব সার)। নিয়মিত পানি দেওয়ার পাশাপাশি গাছের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করলে আপনি সহজেই গাঁদা ফুলের চারা তৈরি করতে পারবেন এবং সুস্থ ও সুন্দর গাছ পাবেন।

গাঁদা ফুল গাছের পরিচর্যা


গাঁদা ফুল গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলে গাছটি স্বাস্থ্যকর থাকে এবং সুন্দর ফুল ফোটে। গাঁদা ফুলের গাছ পূর্ণ সূর্যের আলো পছন্দ করে। প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলো পেলে ভালো হয়। গাঁদা ফুলের গাছ উষ্ণ ও হালকা শীতল তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এদের জন্য উপযুক্ত। 

গাঁদা ফুলের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটি উর্বর ও জলনিকাশ ব্যবস্থা ভালো হওয়া উচিত। মাটিতে জল দাঁড়িয়ে থাকলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। তাই মাটি যাতে সহজেই পানি নিষ্কাশন করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। মাটি সবসময় স্যাঁতসেঁতে রাখা উচিত, তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। 

শুষ্ক মৌসুমে সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিন এবং বর্ষাকালে পানি দেওয়ার প্রয়োজন কম। সকালে বা বিকেলের দিকে পানি দেওয়া ভালো। এ সময় মাটি পানি শোষণ করতে সুবিধা হয়। গাছের আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখুন। আগাছা গাছের পুষ্টি চুরি করে নেয়। গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি ও ফুল ফোটার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য শীর্ষ কুঁড়ি কেটে দিন। এটি গাছকে ঝোপালো ও বেশি ফুলদান করতে সাহায্য করবে। পুরনো ও মরা ডালপালা কেটে ফেলুন। এটি গাছকে স্বাস্থ্যকর রাখে।

গাঁদা ফুল গাছের সার কিভাবে প্রয়োগ করতে হয়


পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার গাছের বৃদ্ধির জন্য ভালো। প্রতি মাসে একবার জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন। রাসায়নিক সার গাছের বৃদ্ধির জন্য NPK (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ) সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ১০-১০-১০ অনুপাতে সার প্রয়োগ করতে পারেন।

কিভাবে গাঁদা ফুল গাছের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়


গাঁদা ফুল গাছে ছত্রাকজনিত রোগ হতে পারে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন। গাঁদা ফুল গাছে এফিড, মাইট ইত্যাদি পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। প্রাকৃতিক কীটনাশক বা রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করুন।

এই ভাবে অনুসরণ করলে আপনার গাঁদা ফুল গাছ সুস্থ থাকবে এবং প্রচুর সুন্দর ফুল ফোটাবে। ফুলগুলো পূর্ণ ফোটার পর সংগ্রহ করুন। ফুল তোলার সময় সাবধানে তুলুন যাতে গাছের ক্ষতি না হয়।
গাঁদার ব্যবহার: বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই ফুল ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

গাঁদা ফুল গাছের জাত


গাঁদার কয়েকটি জনপ্রিয় জাত হলো-
সাহারা মিক্সড, ইনকা এফ-১, পারফেকশন এফ-১, ভ্যানিলা এফ-১, মার্বেল মিক্স এফ-১, নিউচ্যাম্পিয়ন, বোনিতা মিক্সড, সাফারি মিক্সড, রেড মারিয়েন্ডা, হ্যানিকম, রেড চেরি, গোল্ডেন জেম, রেড জেম, লেমন স্টার ইত্যাদি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url