আলুর রোগ ও পোকা প্রতিরোধ পরিচর্যা - আলু চাষের জন্য সুষম সার ব্যবহার
পটল গাছের মূল বা ছিদ্রকারী পোকাআলুর রোগ ও পোকা প্রতিরোধ পরিচর্যা এবং আলু চাষের জন্য সুষম সার ব্যবহার সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করছি আলু চাষের জন্য সার প্রয়োগ পদ্ধতি এবং আলু চাষের জন্য সেচ পদ্ধতি। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো সেগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করা অনুরোধ রইল।
আরো পড়ুনঃ আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই
আলু চাষ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি কার্যক্রম, এবং এটি খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আলু পৃথিবীর বহু দেশে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পুষ্টিগুণ ও বহুমুখী ব্যবহার একে অন্যতম প্রধান খাদ্য শস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাণিজ্যিক উপায়ে আলুর ফলন বৃদ্ধির কৌশল
আলু চাষ কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। অধিক ফলন ও ভালো বাজার মূল্য কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে সাহায্য করে। অনেক দেশ আলু ও আলুর তৈরি পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এতে দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা যায়। আলু থেকে চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর গুঁড়া ইত্যাদি নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করা হয়, যা শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশের সর্বপ্রধান সবজি হচ্ছে আলু। পৃথিবীর প্রায় ৪০টি দেশের প্রধান খাদ্য আলু। আমাদের দেশেও এটি হতে পারে ভাতের পরিপূরক খাদ্য। আলুর হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৪ টন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩০- ৪০ টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব। আলু চাষ ফসল বৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং জমির উর্বরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি পদ্ধতির ব্যবহার আলু চাষকে বিভিন্ন জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রতিকূলতার সাথে অভিযোজিত করতে সক্ষম করেছে।
আলুর ফলন অধিক পাওয়ার কৌশল
- উচ্চফলনশীল জাতের ব্যবহারঃ বারি আলু- ১, ৪, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৫। এছাড়া বারি টিপিএস ১ ও ২ জাতের প্রকৃত বীজ দ্বারা আলু চাষ করে বীজের খরচ কমানো যায়। বারি টিপিএস-২ মড়ক ও ভাইরাস প্রতিরোধী।
- জমি তৈরিঃ ভালভাবে জমি চাষ করুন এবং সঠিক সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। মাটির pH পরীক্ষা করে, প্রয়োজনে উপযুক্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করুন। আড়াআড়ি ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি মিহি করে তৈরি করতে হয়।
- উপযুক্ত মাটিঃ বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
- সময়মতো বপনঃ স্থানীয় জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে বপনের সময় নির্ধারণ করুন। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে বপন করা ভাল। দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণের ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহ এবং উত্তরাঞ্চলে মধ্য কার্তিক বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
- বীজের হারঃ প্রতি হেক্টরে ১.৫ টন বা ৬০৭ কেজি প্রতি একরে (৭.৫ কেজি / শতাংশ)। সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করুন। সাধারণত প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন গোবর সার, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ৩০০ কেজি টিএসপি, ২০০ কেজি এমওপি প্রয়োজন।
আলু চাষের জন্য সুষম সার ব্যবহার
সারের নাম সারের পরিমাণ
হেক্টরে একরে
গোবর ৮-১০ টন ৩.২৫-৪.০০ টন
ইউরিয়া ২২০-২৫০ কেজি ৯০-১০০ কেজি
টিএসপি ১২০-১৫০ কেজি ৪৮-৬০ কেজি
এমপি ২২০-২৫০ কেজি ৯০-১০০ কেজি
জিপসাম ১০০-১২০ কেজি ৪০-৪৮ কেজি
জিংক সালফেট ৮-১০ কেজি ৩-৪ কেজি
আলু চাষের জন্য সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বোনার আগে চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে। অম্লীয় বেলে মাটিতে ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর (একরে ৩২-৪০ কেজি) ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটিতে বোরন ৮-১০ কেজি (একরে ৩-৪ কেজি) প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।
আলু চাষের জন্য সেচ পদ্ধতি
আলু চাষের জন্য সেচ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সেচ পদ্ধতি ব্যবহারে আলুর ফলন বৃদ্ধি পায় এবং গুণগত মানও ভাল হয়। বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর প্রথম সেচ, ৪০-৫০ দিন পর দ্বিতীয় সেচ এবং ৬০-৭৫ দিন পর তৃতীয় সেচ দিতে হয়। উত্তরাঞ্চলে অধিক ফলনের জন্য ৮-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁড়স গাছের পোকামাকড় আক্রমণ
তবে বৃষ্টিপাত বা মাটিতে রসের অবস্থার ওপর সেচ কম বেশি করতে হয়। প্রথম ২-৩ সপ্তাহে আলুর চারার জন্য পর্যাপ্ত সেচ দিন।আলু গাছের ফুল ফোটার সময়ও পর্যাপ্ত সেচ দিন। আলুর ফলন বৃদ্ধির জন্য সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেচ পদ্ধতি এবং পরিমাণ নির্ধারণের সময় স্থানীয় জলবায়ু, মাটির ধরণ এবং আলুর জাতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন।
আলুর রোগ ও পোকা প্রতিরোধ পরিচর্যা
আলু লাগানোর মাসখানেক পর সারি বরাবর মাটি তুলে দিতে হবে। আলু গাছের রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।এছাড়াও নিম্নলিখিত যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁড়শের বীজ বপনের পদ্ধতি
মড়ক রোগ দমনঃ এ রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। ক্রমশ দাগ বড় হয় ও সম্পূর্ণ পাতা ডগা ও কাণ্ডের অংশবিশেষ ঘিরে ফেলে। ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে। আক্রান্ত ক্ষেতের ফসল পুড়ে গেছে বলে মনে হয়। মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই সারা ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে।
১) আক্রমণের শুরুতেই রিডোমিল বা ডাইথেন-এম-৪৫ অনুমোদিত হারে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
২) ভবিষ্যতে রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক সময়ে আলু সংগ্রহ
আলুর গাছের পাতার রঙ হলুদ হয়ে গেলে ফসল সংগ্রহ করুন। আলু সংগ্রহের পর ভালভাবে শুকিয়ে, বাছাই করে সংরক্ষণ করুন।
ফলনঃ হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ টন (একরে ১০-১২ টন)।
এই কৌশলগুলো অনুসরণ করলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। আলু চাষের এই বহুমুখী ভূমিকা জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url