সহপাঠঃ লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
সহপাঠঃ লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। ইচ্ছা পূরণের জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। যেমনটি করেছিলেন সকিনা বেগম। বিশ বছরের বিবাহিত জীবনে যখন কোনো সন্তানের মা হতে পারেননি, তখন একদিন স্বামীর কাছে তার ইচ্ছার কথা বলেন- তিনি একটি সন্তান দত্তক নিতে চান। তার স্বামী আফাজ আলী স্ত্রী হিসেবে তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। সন্তান লাভের আশায় আফাজ আলী তার স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হন এবং একটি অনাথ শিশুকে দত্তক দেন। এভাবে তিনি স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ করে তার মর্যাদা দান করেন।
(গ) উদ্দীপকের সকিনা বেগমের ভাবনার সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের রহিমার ভাবনার সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের সকিনা বেগমের ভাবনার সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের রহিমার সাদৃশ্য আছে নিঃসন্তান হওয়ার দিক থেকে, বৈসাদৃশ্য আছে মাজারের প্রতি অন্ধবিশ্বাসে। উদ্দীপকে সকিনা বেগম বিশ বছরের বিবাহিত জীবনে কোনো সন্তানের মা হতে পারেননি। ইচ্ছা পূরণের জন্য তাই একদিন তিনি স্বামীর কাছে তার ইচ্ছার কথা জানান।
তিনি একটি সন্তান দত্তক নিতে চান। তার স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ প্রস্তাবে রাজি হন। অপরদিকে, 'লালসালু' উপন্যাসে রহিমা মজিদের প্রথম স্ত্রী। বিয়ের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও রহিমা মজিদ দম্পত্তি নিঃসন্তান ছিলেন। মজিদের লালসালু আকৃত মাজারে মাঝে মাঝে অতি সঙ্গোপনে রহিমা আর্জি জানায়, তিনি যেন তাকে একটি সন্তান দেন।
এই আর্জি সে জানায় অতি গোপন মনে শিশুর সরলতায়। দমকা বাতাসে যখন সালুকাপড়ের প্রান্ত নড়ে ওঠে তখন রহিমার মনে হয়। কে যেন কথা বলতে চাইছে। যার প্রকৃতপক্ষে কোনো ভিত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণই রহিমার অন্ধবিশ্বাস। উদ্দীপকে সকিনার মাঝেও সন্তানের জন্য হাহাকার আছে কিন্তু সে রহিমার মত অন্ধবিশ্বাসী নয়।
এদিক থেকে তাদের মাঝে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। কিন্তু সন্তান লাভের ক্ষেত্রে দত্তক নেয়ার দিক থেকে তাদের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান। রহিমা হাসুনিকে বড়োই ভালোবাসতো। সে মজিদের কাছে আর্জিও জানায় হাসুনিকে পোষ্য করে রাখতে। যদিও মজিদ সে আর্জি মেনে নেয়নি।
(ঘ) উদ্দীপকের আফাজ আলী যেভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন মজিদ সেভাবে পারেনি- উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের আফাজ আলী যেভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন মজিদ সেভাবে পারেনি উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের আফাজ আলী তার স্ত্রীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তার মর্যাদা দিয়েছেন কিন্তু মজিদ রহিমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়নি। উদ্দীপকে নিঃসন্তান সকিনা বেগম একটি সন্তান দত্তক নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তার স্বামীর কাছে। তার স্বামী আফাজ আলী স্ত্রী হিসেবে তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। সন্তান লাভের আশায় আফাজ আলী তার স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হন এবং একটি অনাথ শিশুকে দত্তক নেন। এভাবে তিনি স্ত্রীর ইচ্ছা পুরণ করে তার মর্যাদা দান করেন।
'লালসালু' উপন্যাসে রহিমা-মজিদ দম্পতি নিঃসন্তান ছিল। বিয়ের অনেক দিন পার হলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। একদিন মজিদ আক্ষেপ করে বলে ওঠে তাদের যদি একটি সন্তান থাকতো। এমন কথা মজিদ এর আগে কখনো বলেনি। হঠাৎ করেই রহিমা বলে ওঠে তার বড় সখ হাসুনিকে পুষ্যি রাখা। হাসুনিকে সে বড়োই ভালোবাসে।
প্রথমে মজিদ চুপচাপ থাকলেও পরক্ষণে বলে ওঠে। নিজের রক্ত বলে একটা ব্যাপার আছে, তা না হলে মন ভরেনা। তাছাড়া সে হাসুনির মায়ের জন্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিষয়টিকে আরো গুরুগম্ভীর করে তোলে। এভাবে রহিমার ইচ্ছাটিকে প্রাধান্য না দিয়ে সে রহিমাকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করতে পারেনি। বরং সন্তান লাভের আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করে রহিমাকে অন্তঃসারশূন্য করে দেয় মজিদ। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের আফাজ আলী যেভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন মজিদ সেভাবে পারেনি।
০২। জব্বার আলি একদিন স্বপ্নে খুঁজে পায় এক কামেল পিরের মাজার। বন-জগল ঘেরা 'বাঘের মাঠ' খ্যাত সাফাভাদা গ্রাস। এই গ্রানেই শায়িত আছেন এক কামেল পির। স্বপ্নের কথা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের ভিতর। স্থানীয় জনগণ খুঁজে পায় এক প্রাচীন পরিত্যক্ত মাজার। জঙ্গল পরিক্ষার করে রাতারাতি সেখানে টিনের ছাউনি ওঠে। চাঁদা তোলা হয় গ্রামবাসীর কাছ থেকে। পরিপাটি ও সুসজ্জিত হয় মাজার। এখানে বিভিন্ন লোক রোগ-শোকের জন্য মানত করতে আসে। এমন কি বন্ধ্যা নারীরাও ছুটে আসে সন্তান লাভের আশায়। এখানে প্রতি বছর এখন মেলা বসে। বর্তমানে মাজারের খাদেম জব্বার আলি।
(গ) উদ্দীপকের সাফাডাঙ্গা গ্রামের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের মহব্বত নগরের সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ (গ) সাধারণ মানুষের ধর্মভীরুতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্নতার দিক থেকে উদ্দীপকের সাফাডাঙ্গা গ্রামের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের মহব্বতনগরের সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকে জব্বার আলি একদিন স্বপ্নে খুঁজে পায় এক কামেল পিরের মাজার। যে গ্রামে এই কামেল পির শায়িত আছেন তার নাম সাফাডাঙ্গা গ্রাম। স্থানীয় লোকজন এই পরিত্যক্ত মাজার খুঁজে পেয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে টিনের ছাউনি দিয়ে সুসজ্জিত মাজার গড়ে তোলে।
এখানে লোকজন নানা মানত নিয়ে ছুটে আসে। কেউ রোগমুক্তির জন্য, কেউ সন্তান লাভের আশায়। অর্থাৎ এলাকার ধর্মভীরু লোকজন অন্ধভাবে মাজার কেন্দ্রিক হতে শুরু করে। অপরদিকে 'লালসালু' উপন্যাসের মহব্বতনগরে নাটকীয় ঘটনার মাধ্যমে মজিদ প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে সে জানায় পিরের স্বপ্নাদেশে মাজার তদারকির জন্য এ গ্রামে তার আগমন।
তার স্বপ্নের বিবরণ শুনে গ্রামের মানুষ ভয়ে এবং শ্রদ্ধায় গ্রামপ্রান্তের বাঁশঝাড় সংলগ্ন কবরটি দ্রুত পরিচ্ছন্ন করে, ঝালরওয়ালা লালসালুতে ঢেকে দেওয়া হয় কবর। কবরটিকে শনাক্ত করা হয় মোদাচ্ছের পিরের কবর নামে। সেখানে প্রতিদিন লোকজন নানা মানত করে আসতে থাকে এবং টাকা-পয়সা দিতে থাকে। অতএব, শেকড় গাড়া কুসংস্কার, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও গ্রামবাসীর সরলতাসহ নানান বিষয়ে উদ্দীপকের সাঞ্চাডাঙা গ্রাম ও মহব্বত নগরের সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকের 'কামেল পিরের মাজার' ও 'লালসালু' উপন্যাসের 'মোদাচ্ছের পিরের মাজার' এক এবং অভিন্ন।”- তোমার মতামতসহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের কামেল পিরের মাজার ও 'লালসালু' উপন্যাসের মোদাচ্ছের পিরের মাজার এক এবং অভিন্ন- উক্তিটি যথার্থ। উদ্দীপকের কামেল পিরের মাজার সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামে। জব্বার আলি স্বপ্নে এই কামেল পিরের মাজার খুঁজে পায়। কামেল পির শায়িত আছে এই গ্রামে। স্থানীয় জনগণ সেই পরিত্যক্ত কবরকে পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তুলে মাজার।
যার অর্থের যোগানের জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়। এখানে লোকজন রোগ মুক্তি লাভের আশায়, সন্তান লাভের আশায় নানা মানত নিয়ে ছুটে আসে। প্রতি বছর কামেল পিরের মাজারে মেলা হয়। বর্তমানে মাজারটির খাদেম সেই জব্বার আলি। অপরদিকে 'লালসালু' উপন্যাসের মোদাচ্ছের পিরের মাজারেরও উৎপত্তি হয় মজিদের স্বপ্নে পাওয়া আদেশ থেকে।
গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মীবশ্বাসের সুযোগ নিয়ে পরিত্যক্ত কবরে লালসালু পরিয়ে গড়ে তোলা হয় মাজার। মাজার তৈরির অর্থের যোগান দেয় গ্রামবাসীরা। এই মাজারে লোকজন টাকা পয়সা দিতে থাকে প্রতিদিন। নানা মানতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে এখানে। এই মাজারের খাদেমের দায়িত্ব নেয় মজিদ নিজেই।
উদ্দীপকের কামেল পিরের মাজার ও লালসালু উপন্যাসের মোদাচ্ছের পিরের মাজারের উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড আলোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে, উভয় মাজারের উদ্দেশ্যই ধর্মব্যবসা এবং ধর্মের নামে ভণ্ডামি; সহজ সরল গ্রামবাসীর বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা। অতএব, এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে কামেল পিরের মাজার ও লালসালু উপন্যাসের মোদাচ্ছের পিরের মাজার এক ও অভিন্ন।
০৩। রিকশাচালক সাহেব আলির মেয়ে সালেহা। প্রাইমারির পর পড়া হয়নি তার। বয়স হয়তো ১২ কি ১৩ বড়ই চঞ্চলা। তিন বোনের মধ্যে সে- ই বড়। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে একদিন বিয়ের প্রস্তাব আসে সালেহার। ছেলে থাকে বিদেশে, দালান বাড়ি, অনেক টাকার মালিক। তবে শর্ত একটা, আপাতত মোবাইল ফোনে বিয়ে, ছেলে দেশে ফিরলে বউকে তুলে নেবে ঘরে। যতদিন না ফিরবে ততদিন বউয়ের খরচপত্র বাবদ টাকা পাঠিয়ে দেবে। এমন প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার উপায় ছিল না দরিদ্র সাহেব আলির। নিয়ম মেনে বিয়ে। তারপর কয়েক বছর পর দেশে ফিরলো ছেলে। ছেলের বয়স এখন পঞ্চাশ।
(গ) উদ্দীপকের 'সালেহার' সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের 'জমিলা' চরিত্রের বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের সালেহার সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের জমিলার মানসিক প্রকৃতিগত ভিন্নতা রয়েছে।
উদ্দীপকের সালেহা রিকশা চালকের মেয়ে। প্রাইমারির পর আর পড়াশোনা করেনি। ১২ কি ১৩ বছর বয়স। স্বভাবে সে বড়ই চঞ্চল। একসময় আত্মীয়ের মাধ্যমে বিয়ে আসে সালেহার। ছেলে বিদেশ থাকে, অর্থ-বিত্তের অভাব নেই, কিন্তু মোবাইলে এখন বিয়ে হবে, দেশে ফিরলে বউ তুলে নিবে। দরিদ্র বাবা সব দাবি মেনে নিলেন।
ফলে পঞ্চাশ বছর বয়সি এক লোকের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু 'লালসালু' উপন্যাসের জমিলার ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। সেও বাল্যবিবাহের শিকার। নিঃসন্তান মজিদ সন্তান লাভের আশায় জমিলাকে বিয়ে করে। জমিলা চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। কিন্তু বয়স কম হবার কারণে তার মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের গম্ভীরতা প্রবেশ করে না।
ধর্মকর্ম পালন বা মাজার প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবে সে কোনোভাবেই সচেতন নয়। মাজার সম্পর্কেও সে কোনোভাবে সচেতন ছিল না। ভণ্ড মজিদের শাসনও তাকে ভীত করতে পারেনি। এ অত্যাচারী মজিদের অত্যাচারের প্রতিবাদে সে তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। জমিলা হয়ে উঠেছে নারীধর্ম, হৃদয়ধর্ম ও সজীবতার এক যোগ্য প্রতিনিধি। কিন্তু সালেহার মধ্যে এসকল বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়না। অতএব, উদ্দীপকের সালেহা ও 'লালসালু' উপন্যাসের জমিলার চারিত্রিক বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকটি 'লালসালু' উপন্যাসেরই ক্ষুদ্র সংস্করণ।" মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'উদ্দীপকটি 'লালসালু' উপন্যাসের ক্ষুদ্র সংস্করণ।”- মন্তব্যটি যথার্থ নয়। ( রিকশাচালক গরিব বাবার মেয়ে সালেহার বিয়ে ঠিক হয় বিদেশে থাকা এক পাত্রের সাথে। শর্ত ছিল মোবাইল ফোনে বিয়ে হবে।
যতদিন দেশে না আসে বউয়ের খরচ বাবদ টাকা পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিছুদিন পর যখন পাত্র দেশে ফিরে আসে তখন দেখা যায় ছেলের বয়স পঞ্চাশ। এখানে আমরা গ্রামীণ সমাজের অধিক বয়সি লোকের সাথে বাল্যবিবাহের চিত্র দেখতে পাই। অপরদিকে 'লালসালু' উপন্যাসের বিষয়বস্তু আরো বিস্তৃত। যুগ যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার, অন্ধ-বিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাঙ্ক্ষার যে দ্বন্দু তা এই উপন্যাসে ফুটে উঠেছে।
গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণার জাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে সমৃদ্ধ 'লালসালু' উপন্যাস। যদিও জমিলাকে বিয়ে করার ঘটনাটি উদ্দীপকের অধিক বয়সি লোকের সাথে বাল্যবিবাহের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
স্বার্থ ও লোডের বশবর্তী হয়ে এক শ্রেণির লোক যে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানান ভণ্ডামি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয় তা উদ্দীপকে উল্লিখিত নয়। নর-নারীর সচেতন ও অবচেতন মনের নানান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে, যা উদ্দীপকে দেখা যায় না। সর্বোপরি, উপন্যাসে মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্নতাকে পুঁজি করে চলা ধর্ম-ব্যাবসা এবং এর বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রাণ ধর্মের জাগরণের যে বিষয় উপস্থিত, তা উদ্দীপকে দেখা যায় না। তাই উদ্দীপটিকে 'লালসালু' উপন্যাসের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যায় না।
০৪। বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চলের এক গ্রামের গরিব অসহায় পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। কারণ, ঐ বাড়ির ছেলের বিয়েতে গ্রামের মাতব্বর পরিবারকে দাওয়াত করা হয়নি। এ কারণেই খেপে যায় মাতব্বর ও তার লোকজন। সভা করে একঘরে করে দেয় সেই গরিব পরিবারটিকে। পরিবারের লোকদের বাইরে যাওয়ার রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
(গ) উদ্দীপকের টেকনাফ অঞ্চলের ঘটনাটির সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? কেন?
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের টেকনাফ অঞ্চলের ঘটনাটি সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের আমেনার উপর নেওয়া প্রতিশোধের ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে। লালসালু উপন্যাসের আমেনা খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী। তারা নিঃসন্তান ছিলেন। পাশের কয়েক গ্রাম পরে একজন পীর সাহেবের আগমনের ঘটনায় আমেনার মনে আশার আলো জেগে ওঠে।
সে চায় পিরের কাছ থেকে পানি পড়া নিবে। কিন্তু এ কথা মজিদের কানে পৌঁছে যায়। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। সে আমেনাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য পেটে বেড়ি পড়ার ঘটনা সাজায়। নানান অপবাদ দিয়ে সে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে আমেনাকে তালাক দেয়ায়। এ ঘটনার মাধ্যমে তার প্রতিশোধস্পৃহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
অপরদিকে টেকনাফের এক গরিব অসহায় পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। কারণ ঐ বাড়ির ছেলের বিয়েতে গ্রামের মাতব্বর পরিবারটিকে দাওয়াত দেয়নি। এ কারণে খেপে যায় মাতব্বর ও তার লোকজন। সভা করে একঘরে করে দেয় তাদের। এতে মাতব্বর ও তার লোকজনের প্রতিশোধ স্পতার চিত্র ফটে উঠে। যা 'লালসাল' উপন্যাসের মজিদের প্রতিশোধপরায়ণতার দিক প্রকাশ করে।
বি.দ্র: তাহের-কাদেরের বাপের ওপরও মজিদের প্রতিশোধপরায়ণতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু সে নিজেই গ্রাস ছেড়ে চলে গেছে। মজিদ তাকে সরাসরি গ্রামছাড়া করেনি। অপরদিকে আমেনা বিবিকে তালাক দিতে সে সরাসরি খালেক ব্যাপারীকে প্ররোচিত করেছে। যলে এই ঘটনাটিই উদ্দীপকের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।]
(ঘ) উদ্দীপকের মাতব্বর ও তার লোকজন এবং 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ অভিন্ন চেতনার অনুসারী।"- মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকের মাতকার ও তার লোকজন এবং 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ অভিন্ন চেতনার অনুসারী মন্তব্যটি যথার্থ। 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মহব্বতনগর গ্রামে শেকড় ছড়িয়েছে। এজন্য সে যে কোনো কাজ করতেই প্রস্তুত, তা যতই নীতিহীন বা অমানবিক হোক।
একান্ত পারিবারিক ঘটনার থেকে শুরু করে গ্রামের স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সকল বিষয়ে মজিদের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। যখনই কেউ তাকে ডিঙিয়ে কোনো কাজ করতে চায় তখনই সে তাকে কোনো না কোনো ভাবে দমিয়ে দেয়। সে মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ঐশী শক্তির প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য, ভয় ও শ্রদ্ধা, ইচ্ছা ও বাসনা সবাই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
মজিদের সফল উপস্থিতি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় মহকাতনগর গ্রামের সকল সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে। অপরদিকে উদ্দীপকের মাতকার একজন ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ব্যক্তি। তার কথায় টেকনাফের এক গরিব অসহায় পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। তাদের অপরাধ তারা তাদের ছেলের বিয়েতে মাতব্বরকে দাওয়াত দেয়নি। তাই সভা করে তাদেরকে একঘরে করে দেয় তারা। এখানে মাতব্বরের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। সমাজের সকলকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা রাখে সে। যা মজিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুতরাং, তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের মাতকার ও তার লোকজন এবং 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ অভিন্ন চেতনার অনুসারী।