তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
বিগত বোর্ড পরীক্ষাসমূহের CQ প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের নমুনা উত্তর
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। চিত্র শিল্পী কাজী ইকবাল স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। হঠাৎ আসা সুনামির আঘাতে ভেসে গেল তার পরিবারের সবাই। নিজে বেঁচে গেলেও বিয়োগান্তক এই ঘটনার শোকে ভীষণ ভেঙে পড়লেন। ছবি আঁকা নেশা ও পেশা হলেও তিনি আর কখনোই হাতে তুলে নেননি ছবি আঁকার তুলি কিংবা রং।
(গ) উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার ভাববস্তুর সাদৃশ্য আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার যে ভাববস্তুগত সাদৃশ্য আছে তা হল প্রিয়জন হারানোর বেদনা।
'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তার সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। কবির ব্যক্তিজীবনে ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে দুঃসহ বেদনা। কবি আচ্ছন্ন হয়ে যান শীতের রিক্ততার হাহাকারে।
তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা। অপরদিকে উদ্দীপকের চিত্র শিল্পী কাজী ইকবাল স্ত্রী পুত্র-কন্যাসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার, হঠাৎ আসা সুনামির আঘাতে ভেসে গেল তার পরিবারের সবাই। একমাত্র তিনি বেঁচে রইলেন। কিন্তু বিয়োগান্তক এই ঘটনার শোকে ভীষণ ভেঙে পড়লেন তিনি।
ছবি আঁকা নেশা ও পেশা হলেও আর কখনো রং তুলি হাতে নেননি তিনি। অর্থাৎ প্রিয়জন হারানোর বেদনায় তার জীবন থেকে সব রং হারিয়ে গেছে। আপনজন হারানোর এ কষ্টের দিক থেকেই উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার ভাববস্তুগত সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ যে মনোবেদনা বর্ণিত হয়েছে উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত।" মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
উত্তরঃ (ঘ) "'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ যে মনোবেদনা বর্ণিত হয়েছে উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত"-মন্তব্যটি যথার্থ।
'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাটি মূলত কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে নিয়ে রচিত। তবে এর পাশাপাশি যে বিষয়টি এতে স্থান পেয়েছে সেটি হল কবির প্রকৃতি ঘনিষ্ঠতা। এ কবিতায় মানব মন ও প্রকৃতির সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণত প্রকৃতির সৌন্দর্য মানব মনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস।
বসন্ত প্রকৃতির রূপ কবি মনে শিহরণ জাগাবে এবং কবি তাকে বিভিন্নভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবে এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু প্রিয়জন হারিয়ে এখন কবি মনে শুধুই শীতের রিক্ততা। অপরদিকে উদ্দীপকের চিত্রশিল্পী ইকবাল কাজী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হঠাৎ সুনামির আঘাতে তার পরিবারের সকলকে হারিয়ে ফেলেন।
এতে তিনি তার নেশা এবং পেশার কাজ ছবি আঁকাকে ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ঘনিষ্ঠতার কোনো চিত্র আমরা দেখতে পাইনি। অতএব এ থেকে বোঝা যায় যে 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির প্রকৃতি ঘনিষ্ঠতার যে মনোবেদনা বর্ণিত হয়েছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
০২। কলেজ থেকে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গেল গালিবসহ তার বন্ধুরা। সাগরের পানিতে নেমেছে সবাই, খুব হৈচৈ আর লাফালাফি করে গোসল করছে তারা। হিমছড়ি পাহাড়ে উঠে আনন্দে আত্মহারা সবাই। কিন্তু গালিব এক কোণে বসে আছে, তার মনে কোনো আনন্দ নেই, কারণ পাঁচ বছর আগে সে তার বাবার সাথে এখানে এসেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল সবাই মিলে। এখন তার বাবা নেই, কিন্তু বাবার রেখে যাওয়া সেই স্মৃতি তাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে সমস্ত আনন্দই তার কাছে ম্লান হয়ে আসে।
(গ) "প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও গালিব ও 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার কবি উভয়ের অন্তরে রয়েছে তীব্র বেদনা।"-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের গালিব তাহারেই পড়ে মনে কবিতার প্রিয়জন হারানোর বেদনার দিকটি ধারণ করেছে। উদ্দীপকের গালিব তার বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার বেড়াতে গেছে। সবাই যখন সাগরের পানিতে হৈ-চৈ করছে, পাহাড়ে উঠে আনন্দ করেছে গালিব তখন এক কোণে বসে আছে, তার মনে কোনো আনন্দ নেই।
কারণ পাঁচ বছর আগে তার বাবার সাথে কক্সবাজার ভ্রমণের স্মৃতি এখনো তাকে আচ্ছন্ন কর রেখেছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে প্রকৃতির সৌন্দর্য ম্লান করতে পারেনি। 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির মন জুড়েও শীতের রিক্ততা ও বিষণ্ণতার ছবি। কারণ এখানে কবির ব্যক্তিজীবনে দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে।
তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে তার জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে এসেছে। তাই বসন্ত এলেও কবি নীরব থাকেন, সাহিত্য রচনায় মন দেননা। বসন্তের প্রকৃতি কবিমনে কোনো শিহরণ জাগায় না।
অতএব, উদ্দীপকের গালিব তাহারেই পড়ে মনে কবিতার কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনার দিকটি ধারণ করেছে।
(ঘ) উদ্দীপকের গালিব 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার কোন দিকটি ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
উত্তরঃ (ঘ) 'প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও গালিব ও তাহারেই পড়ে মনে কবিতার কবি উভয়ের অন্তরে রয়েছে তীব্র বেদনা।'-মন্তব্যটি যথার্থ।
গালিব তার বন্ধুদের সাথে শিক্ষাসফরে কক্সবাজার যায়। সেখানে তার বন্ধু সকলে মিলে আনন্দে আত্মহারা হলেও গালিব এক কোণে বসে থাকে। তার মনে কোনো আনন্দ নেই। কারণ পাঁচ বছর আগে সে তার বাবার সাথে এখানে ঘুরতে এসেছিল। অনেক আনন্দ করেছিল সবাই মিলে। এখন তার বাবা নেই, তাই বাবার স্মৃতি মনে করে সে এখনো কোনো আনন্দকে গ্রহণ করে নিতে পারে না।
'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যজীবনে দুঃখময় ঘটনায় ছায়াপাত ঘটে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা ছিলেন তার স্বামী। স্বামীর প্রস্থানের পর তিনি আর কাব্যসাধনায় মনোনিবেশ করতে পারেন না। বসন্তের প্রকৃতি তাঁর মনে শিহরণ জাগায় না। কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ছবি।
উদ্দীপক ও তাহারেই পড়ে মনে কবিতার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ গালিবের বাবার প্রস্থানে গালিবের ব্যক্তিজীবনে প্রভাব পড়েছে। কিন্তু তাহারেই পড়ে মনে কবিতার কবির ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্য সাধনা উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। কিন্তু উভয়েই তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। তাদের উভয়ের অন্তরেই তীব্র বেদনা।
০৩। বাইক্কা বিলের বর্ষার সৌন্দর্য কতই না চমৎকার। কাকের চোখের মতো টলটলে জল, রঙিন শাপলা-শালুক, কলমি লতার মতো নানাবিধ ফুল, পানকৌড়ি বুনো হাঁসের মতো বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পাখি কার না ভালো লাগে। কিন্তু এমন মনোলোভা সৌন্দর্যের কাছে এসেও সেজুতি জামান আজ বিষণ্ণ। কারণ কয়েক বছর আগে নৌকা করে এ বিল পার হতে গিয়েই তার দশ বছরের ছেলে আবির মারা যায়।
(গ) উদ্দীপকের সেজুতি জামানের মনোভাব 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার সাথে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ? - ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ(গ) উদ্দীপকের সেজুতি জামানের মনোভাব তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সাথে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ। 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনায় তার ব্যক্তিজীবনে নেমে আসে শোকের ছায়া। বসন্তের আগমনে তার কোনো আনন্দ নেই। তিনি সর্বক্ষণ শোকাচ্ছন্ন থাকেন। কাব্য রচনায় তাঁর মন নেই প্রকৃতি নবরূপে সাজলেও কবির মনে রয়ে গেছে শীতের রিক্ততা। উদ্দীপকের সেজুতি জামান বাইক্কা বিল ঘুরতে এসেও শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছেন।
বাইক্কা বিলের অপরূপ সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হতে পারছেন না। কারণ এই বিল পার হতে গিয়েই তার দশ বছরের ছেলে আবির মারা যায়। তিনিও কবির মত প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর। অর্থাৎ, উদ্দীপক ও 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতা উভয় স্থানে প্রিয়জন হারানোর শোকের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পারার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আর এদিক থেকেই সেজুতি জামানের মনোভাব 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
(ঘ) উদ্দীপকটিতে 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার সামগ্রিক ভাবনার সবটুকু ধরা পড়েছে বলে কি তুমি মনে কর? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ (ঘ) উদ্দীপকটিতে 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার সামগ্রিক ভাবনার সবটুকু ধরা পড়েছে বলে আমি মনে করি। উদ্দীপকে সেজুতি বাইক্কা বিল ঘুরতে যেয়েও প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারেনি। কারণ এই একই স্থানে সে তার ছেলেকে হারিয়েছিল। অর্থাৎ সে তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে যা তাঁর ব্যক্তিজীবনে আঘাত হেনেছে।
অপরদিকে তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি সবসময় বেদনা ভারাতুর হয়ে থাকেন। কারণ তাঁর ব্যক্তিজীবন এবং কাব্য জীবনে এক দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে তার জীবনে দুঃসহ বিষণ্ণতা নেমে এসেছে। বসন্ত এলেও তাঁর অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা।
কবি বসন্ত-বন্দনা নিয়ে কবিতা লিখতেও উদাসীন। কবি ভক্তের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না।
উদ্দীপকে যেমন প্রকৃতির বিচিত্র রূপের বর্ণনা দেয়া আছে, কবিতাতেও বসন্তের রূপের সেরূপ বর্ণনা বিদ্যমান। প্রকৃতির সাথে মানব-মনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক কবিতায় দেখানো হয়েছে। উদ্দীপকেও বলা হয়েছে বাইক্কা বিলের চমৎকার সৌন্দর্য মনোলোভা, কিন্তু প্রকৃতির এ রূপ-সৌন্দর্য উদ্দীপকের সেজুতি বা কবিতার কবিকে প্রভাবিত করছে না, কারণ তাদের হৃদয় জুড়ে আছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে 'তাহারেই পরে মনে' কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশিত হয়েছে।
০৪। "ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি
করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের করা ফুলগুলি।
কাল হতে আর ফুটবে না হায়, লতার বুকে মঞ্জরী
উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুণ নিশাস মর্মরী।
গানের পাখি গেছে উড়ে শূন্য নীড়
কণ্ঠে আমার নাই সে আগের কথার ভিড়।"
(গ) উদ্দীপকের কবি এবং "তাহারেই পড়ে মনে" কবিতার কবির অন্তর্বেদনাকে এক সুতায় গাঁথা যায় কি-আলোচনা কর।
উত্তরঃ (গ) উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনা ফুটে উঠেছে বলে উদ্দীপকের কবি এবং 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতার কবির অন্তর্বেদনাকে একই সুতোয় গাঁথা যায়।
'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামীর মৃত্যুতে তাঁর জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তি জীবন ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণ্ণতা। রিক্ততার হাহাকারে কবি মন আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তাই প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির অন্তর জুড়ে বিরাজ করে শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা। তাঁর এ বিষাদময় রিক্ততার সুর 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাটিকেও আচ্ছন্ন করে রেখেছে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও আমরা কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবি যেমন 'শীতের রিক্ততা'র রূপকে তাঁর স্বামী হারানোর বেদনা প্রকাশ করেছেন, উদ্দীপকের কবিতাংশের কবিও 'গানের বুলবুলি' রূপকের আড়ালে মূলত তাঁর সন্তান হারানোর বেদনা প্রকাশ করেছেন।
বসন্তের আগমন যেমন সুফিয়া কামালের মনে কোনো আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে না, তিনি প্রকৃতিকে রিক্ত-শূন্যরূপে কল্পনা করেন। উদ্দীপকের কবিও তেমনি প্রকৃতির মাঝে শুধু শূন্যতাই খুঁজে পান। শীতের কুয়াশার মাঝে কবির স্বামী হারিয়ে যাবার মতো উদ্দীপকের কবির গানের পাখিটিও তার নীড় ছেড়ে উড়ে গেছে।
এভাবে উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা- উভয় জায়গাতেই দুজন কবির প্রিয়জন হারানোর মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। একারণে তাদের অন্তর্বেদনাকে এক সুতায় গাঁথা যায়।
(ঘ) কণ্ঠে আমার নাই সে আগের কথার ভিড়।"- তাহারেই পড়ে মনে, কবিতার আলোকে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ (ঘ) প্রিয়জন হারানোর কষ্টে কবি সুফিয়া কামাল যেমন ছন্দে-সুরে বসন্তের আগমনী রূপকে বর্ণনা করতে পারেন না, সেই একই ঘটনা ঘটেছে উদ্দীপকের কবির ক্ষেত্রেও। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি এ বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে।
বসন্ত-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবি মনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে, ছন্দে, সুরে ফুটিয়ে তুলবেন- এমনটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবি মন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা ভারাতুর থাকে, তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না। 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ক্ষেত্রে আমরা এই বিষয়টিই লক্ষ করি। কবিতায় আমরা দেখি, প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষণ্ণ ছবি।
কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্তের আগমন তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছেনা। বসন্তের সৌন্দর্য তাঁর কাছে অর্থহীন। তাই তিনি নতুন কবিতা রচনা করে বসন্তকে বরণ করতে কোনো আগ্রহ দেখান না। প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটির মাঝেও আমরা কবির এ মনোভাবের প্রকাশ লক্ষ করি। উদ্দীপকের কবি হৃদয়ও প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর।
ফলে প্রকৃতির মাঝে তিনি শুধু রিক্ততা ও শূন্যতা খুঁজে পান। প্রিয়জন হারানো ব্যথায় তিনি মনে করেন লতার বুকে আর মঞ্জরী ফুটবে না, পাতার মর্মর শব্দের সাথেও তিনি শূন্যতা খুঁজে পান। আর এ সকল কারণে তাঁর কন্ঠে আর আগের মতো কথা ভিড় জমায় না। সুতরাং 'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতা ও প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটির মাঝে কবি মনের বিষাদের অনুভূতির প্রকাশ লক্ষ করা যায়।