ব্রকলির কোন মাটিতে ও কোন জলবায়ু / আবহাওয়াতে চাষ করা হয়

ব্রকলির কোন মাটিতে ও কোন জলবায়ু / আবহাওয়াতে চাষ করা হয় এবং ব্রকলির চাষের জন্য জমি তৈরি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ব্রকলির কোন মাটিতে ও কোন জলবায়ু / আবহাওয়াতে চাষ করা হয়
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি ব্রকলির বীজ বপনের সময় এবং ব্রকলির চারা রোপনের পরিচর্যা। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেইগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

ব্রকলি উৎপাদনের উন্নত পদ্ধতি


বাংলাদেশে ব্রকলি মোলানেসি পরিবারের একটি নতুন শীতকালীন সবজি। বাংলাদেশে ইহা সবুজ ফুলকপি নামেও পরিচিত। পুষ্টির দিক দিয়েও অনেক সমৃদ্ধ। ক্যানসার রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্রোকলির গুণ রয়েছে।

ব্রকলির পুষ্টিমাণ


ব্রকলি একটি পুষ্টিকর সবজি, যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। ব্রকলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ব্রকলির ফাইবার, পটাসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ব্রকলিতে সালফোরাফেন নামক যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক বলে ধারণা করা হয়।

পরিমাণগত বিবরণ প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে
  • ক্যালরিঃ ৩৪ ক্যালরি
  • প্রোটিনঃ ২.৮ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ৬.৬ গ্রাম
  • ফাইবারঃ ২.৬ গ্রাম
  • চর্বিঃ ০.৩৭ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ৮৯.২ মিলিগ্রাম (প্রায় ৯৯% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)
  • ভিটামিন কেঃ ১০১.৬ মাইক্রোগ্রাম (প্রায় ৮৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)
  • ফোলেটঃ ৬৩ মাইক্রোগ্রাম (প্রায় ১৬% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)
  • পটাসিয়ামঃ ৩১৬ মিলিগ্রাম (প্রায় ৯% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)
  • ক্যালসিয়ামঃ ৪৭ মিলিগ্রাম
  • আয়রনঃ ০.৭৩ মিলিগ্রাম
ব্রকলি সঠিকভাবে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে কাজ করতে পারে।

ব্রকলির কোন মাটিতে ও কোন জলবায়ু / আবহাওয়াতে চাষ করা হয়


ফুলকপি ও ব্রকলির জলবায়ু প্রায় একই রকম। ফুলকপির তুলনায় ইহা উচ্চ তাপমাত্রা ও খরা বেশি সহ্য করতে পারে। ব্রোকলি ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভাল জন্মে। জৈব সার সমৃদ্ধ উর্বর দো-আঁশ উচু জমি এবং মাটির pH মান ৬-৭ হলে তা ব্রোকলি চাষের জন্য সর্বোত্তম।

ব্রকলির জাত


ব্রকলির স্থানীয় কোন জাত নেই। প্রধানতম বিদেশী জাতগুলা হচ্ছে প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রীন কমেট, গ্রীন ডিউক, ক্রসেডার, ডিসিক্কো, টপার-৪৩, ডান্ডি, ইটালীয়ান গ্রীন, স্প্রডিটিং টেক্সাস ১০৭, ওয়ালথাম ২৯।

ব্রকলির বীজ বপনের সময়


ভাদ্র-আশ্বিন মাসে আগাম জমি প্রস্তুত করতে হয়। তবে কার্তিক মাস পর্যন্ত বীজতলায় এর বীজ বোনা যেতে পারে। ব্রকলির বীজের মাত্রা প্রতি হেক্টরে ১৫০ গ্রাম বীজ লাগে।

ব্রকলির চারা উৎপাদন


পাতা পচা সার বা গোবর সার ১ ভাগ, বালু ১ ভাগ ও মাটি ২ ভাগ মিশিরে ব্রকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলার মাপ হচ্ছে ১ মি. প্রস্থ, ৩ মি. দৈর্ঘ্য ও ১৫ সে.মি. উচ্চতা। ১ হেক্টর জমিতে রোপনের জন্য এরূপ ২০ টি বীজ তলায় চারা তৈরীর প্রয়োজন হবে। বীজ তলার উপরিভাগে ৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ১-২ সে.মি দূরে বীজ বপন করা হয়। বীজ তলায় চারাকে রোদ বৃষ্টি হতে রক্ষার জন্য আচ্ছাদন বা চাটাইয়ের ব্যবস্থা রাখা উচিত। সকালে বিকেলে সেচ দেওয়ার পর একটি শক্ত কাঠি দ্বারা বীজতলা সাবধানে খুচিয়ে নিড়িয়ে দিতে হয়।

ব্রকলির চাষের জন্য জমি তৈরি


  • ব্রকলি চাষের জন্য জমিতে গভীর চাষ দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে।
  • ২ সারিতে চারা রোপনের জন্য ১ মি. চওড়া ও ১৫-২০ সে.মি. উচু মিড়ি বা বেড তৈরী করতে হবে।
  • সেচ ও পানি নিস্কাশনের সুবিধার জন্য মিড়িতে চারা রোপন করাই ভাল। মিড়ির দৈর্ঘ্য জমির সাইজ এবং কাজের সুবিধা বিবেচনা করে করা যেতে পারে।
  • পাশাপাশি দুই মিড়ির মাঝখানে ৩০ সে.মি. চওড়া এবং ১৫-২০ সে. গভীর নালা থাকবে।

ব্রকলি চাষে হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

সার

মোট পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)

শেষ চাষের সময় (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের পূর্বে (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের ১৫ দিন পর (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের ৩৫ দিন পর (কেজি/হেক্টর)

গোবর/কম্পোষ্ট

১৫০০০

৭৫০০

৭৫০০

-

-

ইউরিয়া 

২৫০

-

-

১২৫

১২৫

এমপি

২০০

-

-

১০০

১০০

টিএসপি

১৫০

-

১৫০

-

-

পচা খৈল

চারাপ্রতি ৫০ গ্রাম

-

-

-

-


ব্রকলি চাষে শতক প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

সার

মোট পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)

শেষ চাষের সময় (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের পূর্বে (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের ১৫ দিন পর (কেজি/হেক্টর)

চারা রোপনের ৩৫ দিন পর (কেজি/হেক্টর)

গোবর/কম্পোষ্ট

৬০

৩০

৩০

-

-

ইউরিয়া 

-

-

০.৫০

০.৫০

এমপি

০.৮০

-

-

০.৪০

০.৪০

টিএসপি

০.৬০

-

০.৬০

-

-

পচা খৈল

চারাপ্রতি ৫০ গ্রাম

-

-

-

-

সারাদিন রোদ পায় এমন জমি গভীরভাবে চাষ করে জমি তৈরি করতে হবে। দুই সারিতে চারা রোপনের জন্য জমি চওড়া ও ১৫-২০ উঁচু মিড়ি বা বেড তৈরী করতে হবে। দুইটি মিড়ির মাঝে ৩০ সে.মি. চওড়া এবং ১৫-২০ সে.মি. গভীর নালা থাকবে। জমিতে নিচের সারণী অনুযায়ী সার দিতে হবে।

ব্রকলি চাষে চারা রোপন


বীজ তলায় চারা ৫-৬ টি পাতা হলে প্রধান জমিতে রোপন করতে হয়। সে সময় চারার ৮-১০ সে.মি. উচ্চতা হয়। তবে ৪-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা রোপন সবচেয়ে উত্তম। ৬০ সে. মি. ব্যবধানে সারি করে সারিতে ৫০ সে.মি. দূরত্বে চারা লাগানো হয়।

ব্রকলির ফসল সংগ্রহ ও ফলন


ব্রকলি রোপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে পুষ্পমঞ্জুরী সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ধারালো ছুরি দ্বারা তিন ইঞ্চি কান্ডসহ পুষ্পমঞ্জুরী কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে একই জমি হতে ১ মাস ব্যাপী কয়েকবার ব্রকলি পাওয়া যায়। পুষ্পমঞ্জুরীর রং ফ্যাকাশে বা ঢিলা হবার পূর্বে মোটামুটি জমাট বাধা অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত। এর ফলন হেক্টরে ১০-১৫ টন।

ব্রকলির চারা রোপনের পরিচর্যা


  • চারা রোপনের প্রথম ৪/৫ দিন একদিন পরপর সেচ দিতে হবে।
  • পানি নিস্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু জমিতে চাষ করতে হবে।
  • মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে নিন, যাতে মাটি উর্বর হয়।
  • চারাগুলির মধ্যে প্রায় ১৮ ইঞ্চি এবং সারিগুলির মধ্যে প্রায় ২৪ ইঞ্চি দূরত্ব রাখা উচিত।
  • প্রতিটি চারার জন্য প্রায় ৬ ইঞ্চি গভীর গর্ত তৈরি করুন এবং চারাগুলি লাগান।
  • প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ পর, নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার বা তরল সার দিতে পারেন। এটা চারার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
  • চারা যাতে দ্রুত বাড়ে সেজন্য চারার গোড়ায় মাটি সব সময় আলগা করে দিতে হবে।
  • আগাছা দমন করতে হবে।
  • পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে চাইলে, নিয়মিত হাত দিয়ে পোকামাকড় সরিয়ে ফেলা এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
  • সার উপরি প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
  • চারাগাছ রোপণের ৫০-৭০ দিনের মধ্যে ব্রকলির তৈরি হতে শুরু করবে।
এই পরিচর্যাগুলো ঠিকমতো মেনে চললে ব্রকলির ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url