প্রস্বেদন এ পত্ররন্ধ্রের ভূমিকা ও কাজ

প্রস্বেদন এর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

পত্ররন্ধ কখন খোলা বা বন্ধ থাকে

প্রস্বেদন (Transpiration): যে শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বায়বীয় অঙ্গ (সাধারণত পাতা, কচি কান্ড, লেন্টিসেল) হতে অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের হয়, তাকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে।
  • উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত পানির মাত্র ১% বিভিন্ন কাজে ব্যয় হয়, বাকি ৯৯% পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়।
  • প্রস্বেদনের ফলে মরুভূমির একটি খেজুর গাছ দৈনিক ৩০০-৪০০ লিটার পানি হারায়।
  • একটি ভুট্টা গাছ হতে প্রতি মৌসুমে (৩-৪ মাস) ২০০-৩০০ লিটার পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়।
  • প্রস্বেদনের হার গ্যানং পটোমিটারের সাহায্যে নির্ণয় করা হয়।

প্রস্বেদনের প্রকারভেদঃ


১. পত্ররন্ধীয় প্রস্বেদনঃ ৯৫-৯৮%/৯০-৯৫% (কাজেই পাতাই প্রস্বেদনের প্রধান অঙ্গ।)
২. ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদনঃ ২-৫%/৫-১০%
  • বহিঃত্বকের উপর যে কিউটিনের (স্নেহ জাতীয়) আস্তরণ থাকে তাকে কিউটিকল বলে।
  • বিশেষত পাতার উভয় পাশের বহিঃত্বকে কিউটিকল থাকে।
  • আর্দ্র, ছায়াময় পরিবেশে জন্মানো উদ্ভিদের কিউটিকল পাতলা ফলে তুর্কীয় প্রস্বেদনের হার বেশি।
  • মরুজ উদ্ভিদের কিউটিকল বেশ পুরু থাকে ফলে ত্বকীয় প্রস্বেদনের হার অত্যন্ত কম হয়।
  • অত্যধিক শুদ্ধ অবস্থায়ও ত্বকীয় প্রস্বেদন চলতে পারে কিন্তু পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বন্ধ হয়ে যায়।
  • এমতাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
৩. লেন্টিকুলার প্রস্বেদনঃ ১%/০.১%
  • উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় কান্ডের কর্ক টিস্যু স্থানে স্থানে ফেটে গিয়ে লেন্টিসেলের সৃষ্টি হয়।
  • লেন্টিসেল পেরিডার্ম স্তরে অবস্থান করে এবং সবসময় খোলা থাকে ফলে দিন-রাত্রি সমভাবে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন চলতে থাকে।
  • লেন্টিসেলের নিচে ফেলেম (বাকল), ফেলোজেন (যারা বাকল তৈরি করে) ও ফেলোডার্ম স্তর থাকে, এদেরকে একত্রে পেরিডার্ম বলে।

পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন এবং ত্বকীয় প্রস্বেদন এর মধ্যে পার্থক্য

পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন

ত্বকীয় প্রস্বেদন 

১. প্রস্বেদন পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে ঘটে

১. প্রস্বেদন কিউটিকলের মাধ্যমে ঘটে

২. পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকলে প্রস্বেদন বন্ধ থাকে

২. পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকলেও প্রস্বেদন চলতে পারে

৩. প্রস্বেদনের হার অনেক বেশি, ৯৫-৯৮%

৩. প্রস্বেদনের হার খুবই কম, ২-৫% বা আরো কম

৪. এ ধরণের প্রস্বেদন রক্ষীকোষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত

৪. এতে রক্ষীকোষের কোনো ভূমিকা নেই


পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন এর সংজ্ঞা ও গঠন


  • উদ্ভিদের সবুজ অংশের ত্বকে, কচিকান্ড, বৃতি, ফুলের পাঁপড়ি, ফল ও পাতায় দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি (বা বৃক্কাকার) রক্ষীকোষ দ্বারা বেষ্টিত ক্ষুদ্র ছিদ্রকে পত্ররন্ধ্র বা স্টোম্যাটা বলে।
  • বিষমপৃষ্ঠ পাতার (দ্বিবীজপত্রী) নিম্ন বহিঃত্বকে, সমদ্বিপৃষ্ঠ পাতার (একবীজপত্রী) ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয় বহিঃত্বকে, পানিতে ভাসমান (শাপলা) পাতার ঊর্ধ্ব-বহিঃত্বকে পত্ররন্ধ্র (পানিরন্ত্র) থাকে, মরুজ ও লবণাক্ত উদ্ভিদের পাতা ও কান্ডের ত্বকের গভীরে লুক্কায়িত পত্ররন্ধ্র (Sunken stomata) থাকে।
  • রক্তকরবী, পাইন, ক্যাসুরিনা, ক্যাকটাস ইত্যাদি মরুজ উদ্ভিদে লুক্কায়িত পত্ররন্ধ্র থাকে।
  • মূলে পত্ররন্ধ্র থাকে না।
  • নিমজ্জিত উদ্ভিদে পত্ররন্ধ্র থাকে না বা থাকলেও নিঃষ্ক্রিয়।

পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন এর গঠন

পত্ররন্ধ
  • পূর্ণ খোলা অবস্থায় পত্ররন্ধের দৈর্ঘ্য 10-40mm এবং প্রস্থ 3-12µm পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • এই রক্ককে বেষ্টন করে দুটি অর্ধচন্দ্রকার বা বুকাকার রক্ষীকোষ ( guard cell) থাকে (বিশেষত একবীজপত্রী উদ্ভিদে রক্ষীকোষ ডাম্বেল আকৃতির হয়ে থাকে)।
  • রক্ষীকোষের মধ্যে ঘন সাইটোপ্লাজম, একটি বড় নিউক্লিয়াস, বহু ক্লোরোপ্লাস্ট এবং স্টার্চদানা থাকে।
  • পত্ররন্ধের নিচে একটি বড় বায়ুপূর্ণ স্থান থাকে, একে বায়ুগহ্বর (respiratory cavity) বা শ্বাস কুঠুরি বা উপপত্ররন্ধীয় গহ্বর (substomatal cavity) বলে।
  • রক্ষীকোষের চারদিকে ভিন্ন আকার-আকৃতির ত্বকীয় কোষ থাকে, যাদের সহকারী কোষ (accessory cell) বা সাবসিডিয়ারি কোষ (subsidiary cell) বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্র পার্শ্ববর্তী ত্বকীয় কোষের সাথে একই তলে অবস্থান করে। সহকারী কোষগুলোসহ প্রতিটি পত্ররন্ধ্রকে পত্ররন্ধ্র কমপ্লেক্স (stomatal complex) বলে। কিছু উদ্ভিদে সহকারী কোষ থাকে না, যেমন-কুমড়া, শশা, কিছু অর্কিড ইত্যাদি।
  • অর্ধচন্দ্রাকৃতির এ কোষ দুটির প্রাচীরের পুরুত্ব সবদিকে সমান নয়।
  • দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে রন্ধের দিকে প্রাচীরের পুরুত্ব বেশি ও অত্যন্ত অস্থিতিস্থাপক এবং বাইরের দিকে পাতলা, স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য। একবীজপত্রী উদ্ভিদের রক্ষীকোষ দুটির অন্তঃপ্রাচীর ও বহিঃপ্রাচীর উভয়ই স্থূল হয় ফলে পত্ররন্ধ্র সংকীর্ণ ও একটি সরলরেখায় অবস্থান করে।
  • পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়া রক্ষীকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্তঃঅভিস্রবণ ও আলোর উপস্থিতিতে রক্ষীকোষ স্ফীত হয় ফলে পত্ররন্ধ্র খুলে যায়।
  • আবার বহিঃঅভিস্রবণের জন্য রক্ষীকোষ স্ফীতি হারিয়ে শিথিল হয় ফলে পত্ররন্ধ বন্ধ হয়ে যায়।
  • পত্ররন্ধ সাধারণত দিনের বেলা খোলা থাকে (১০টা থেকে ১১টা এবং ২টা-৩টা সম্পূর্ণ খোলা বাকি সময় আংশিক) এবং রাতে বন্ধ থাকে; কিন্তু কিছু উদ্ভিদে (যেমন-পাথরকুচি, ঘৃতকুমারী বা রসালো পাতা বিশিষ্ট উদ্ভিদ বা Crassulaceae গোত্রের উদ্ভিদ, মরুজ উদ্ভিদ) রাতে পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে এবং দিনে বন্ধ থাকে।
  • উদ্ভিদের প্রজাতিভেদে পাতার 1 বর্গ সে.মি. এলাকায় পত্ররন্ধের সংখ্যা প্রায় 1000-60000।

পত্ররন্ধ্রের প্রকারভেদ


১। Diacytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধ দুটি সাবসিডিয়ারি বা সহকারী কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দুটি রক্ষীকোষের সাথে সমকোণে।
২। Paracytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্র দুটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দুটি রক্ষীকোষের সাথে সমান্তরালে।
৩। Anisocytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্র তিনটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, এদের একটি কোষ আকারে ছোট।
৪। Tetracytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্র চারটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৫। Actinocytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধ্র অনেকগুলো রেডিয়েলি লম্বা সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৬। Anomocytic: এক্ষেত্রে পত্ররন্ধকে পরিবেষ্টনকারী কোষসমূহ সাধারণ ত্বকীয় কোষ থেকে পৃথকযোগ্য নয়।

পত্ররন্ধ্রের কাজ


১। উদ্ভিদের গ্যাসীয় আদান-প্রদানই পত্ররন্ধ্রের কাজ।
২ । সালোকসংশ্লেষণের সময় পত্ররন্ধের মাধ্যমে CO₂ প্রবেশ করে ও ০₂নির্গত হয়।
৩। পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন হয়, ফলে খাদ্য তৈরি হয়।
৪। শ্বসনের সময় পত্ররন্ধের মাধ্যমে O₂ প্রবেশ করে ও CO₂ নির্গত হয়।
৫। প্রস্বেদনের সময় পানি বাষ্পাকারে পত্ররন্ধের মাধ্যমে নির্গত হয়, এটাই পত্ররন্ধ্রের প্রধান কাজ।

পত্ররন্ধ কখন খোলা বা বন্ধ থাকে

পত্ররন্ধ কখন খোলা বা বন্ধ থাকে

১। মটর, শিম, আপেল ইত্যাদিতে সারাদিন খোলা ও সারারাত বন্ধ থাকে।
২। আলু, বাঁধাকপিতে সূর্যাস্তের সময় ছাড়া সারা দিন-রাত খোলা থাকে।
৩। ভুট্টা, গম, বার্লিতে সারারাত বন্ধ থাকে। দিনের বেলা কয়েক ঘন্টা খোলা থাকে।
৪। ইকুইজিটাম প্রকারের পত্ররন্ধ কখনোই বন্ধ হয় না।

রাতের বেলা উদ্ভিদ দেহে কি কি কার্য সম্পাদন হয়

১. রক্ষীকোষ শিথীল হয়।

পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়

২. দ্রবণীয় চিনি অদ্রবণীয় শ্বেতসার হয়।

অভিস্রবনিক চাপ হ্রাস 

            ↓

বহিঃঅভিস্রবণ

           ↓

রক্ষীকোষ শিথিল

          ↓

পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়

৩. সারাদিনে সৃষ্ট গ্লুকোজ pII 5 এ পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিণত হয়।

৪. সারাদিনে সৃষ্ট গ্লুকোজ pH 5 এ পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিণত হয়।

৫. মেসোফিল কোষে পানির অভাব দেখা দিলে সেখানে অ্যাবসিসিক এসিড তৈরি হয়। যার ফলে K+ রক্ষীকোষ থেকে বের হয়ে যায়। 2K+ রক্ষীকোষ থেকে বেরিয়ে পাশের সহকারী কোষে প্রবেশ করে বিনিময়ে রক্ষীকোষে 2H+ প্রবেশ করে এবং R(COO-)2 এর সাথে বিক্রিয়া করে R(COOH)2 উৎপন্ন করে যেটা থেকে স্টার্চ বা অদ্রবণীয় শ্বেতসার তৈরি হয়।

প্রস্বেদনের বাহ্যিক প্রভাবকঃ


  • আলোঃ ব্লু লাইট বা নীল আলো পত্ররন্ধ্র খোলা ত্বরান্বিত করে। তীব্র আলোতে প্রস্বেদন বেশি হয়।
  • মাটিস্থ পানিঃ সমানুপাতিক সম্পর্ক
  • তাপমাত্রাঃ সাধারণত ১০-২৫° সে. তাপমাত্রায় স্বাভাবিক প্রস্বেদন ঘটে। (সমানুপাতিক সম্পর্ক)
  • আপেক্ষিক আর্দ্রতাঃ ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক।
  • বায়ুচাপঃ ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক। (উঁচু পাহাড়ে বিদ্যমান উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার বেশি)
  • বায়ুপ্রবাহঃ স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহ প্রস্বেদনের হার বৃদ্ধি করে কিন্তু অধিক জোরে বায়ু প্রবাহিত হলে প্রস্বেদন কমে যায়।
  • কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্বঃ ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক (বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ০.০৩%)

প্রস্বেদনের অভ্যন্তরীণ প্রভাবক


  • মূল বিটপ অনুপাতঃ আনুপাতিক হারে মূলের পরিমাণ কম হলে উদ্ভিদের জন্য মাটি হতে পানির প্রাপ্যতাও কমে যায় এবং প্রস্বেদনের হারও কমে যায় অর্থাৎ প্রস্বেদন অঞ্চল অপেক্ষা শোষণ অঞ্চল কম হলে প্রস্বেদনের হার হ্রাস পায়।
  • পাতার আয়তন ও সংখ্যাঃ সমানুপাতিক সম্পর্ক।
  • পাতার গঠনঃ পাতার গঠনের উপর প্রস্বেদনের হার নির্ভরশীল। পাতায় পাতলা কিউটিকল, পাতলা কোষ প্রাচীর, অধিক স্পঞ্জি টিস্যু ও উন্মুক্ত পত্ররন্ধ্র থাকলে প্রস্বেদন তুলনামূলকভাবে বেশি হয় কিন্তু পুরু কিউটিকল, অধিক প্যালিসেড প্যারেনকাইমা এবং পত্ররন্ধ্র গর্ভস্থিত থাকলে প্রস্বেদনের হার কমে যায়। পাতার গায়ে পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা, রন্ধের পরিমাণ রক্ষীকোষের গঠন প্রভৃতি প্রস্বেদনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণঃ পাতার মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ বেশি হলে প্রস্বেদন হার বাড়ে। পক্ষান্তরে, মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ কমলে প্রস্বেদন হার কম হয়।

ট্রান্সপিরেশন সম্পর্কে কিছু তথ্য

ট্রান্সপিরেশন সম্পর্কে কিছু তথ্য

রক্ষীকোষের স্ফীতির পরিবর্তন

রক্ষীকোষের স্ফীতির পরিবর্তন


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url