পটলের বংশ বিস্তার - পটলের লতা লাগানোর নিয়ম

পটলের বংশ বিস্তার এবং পটলের লতা লাগানোর নিয়ম সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
পটলের লতা লাগানোর নিয়ম
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি পটলের পরবর্তী পরিচর্যা এবং পটলের জমিতে পানি সেচ। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো সেইগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

পটল পুষ্টিগুণসম্পন্ন সহজপাচ্য, মূত্র বৃদ্ধিকারক, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের পক্ষে উপকারী একটি উৎকৃষ্ট সবজি। প্রায় সর্বত্র জন্মায়।

পটলের জাত


দেশিঃ জমিতে এবং মাচাতে দু'ভাবেই চাষ করা যায়। আশ্বিন থেকে কার্তিকের মাঝামাঝি পটলের লতা লাগানো যায়।
কাজলিঃ গাঢ় সবুজ রঙের ফল, আকারে একটু বেঁটে ধরনের, ফলের গায়ে হালকা ডোরা থাকে। উচ্চ ফলনশীল জাত।
গুলিঃ ছোট গোলাকার ফল, ওজনে হালকা। ফলন ভাল।

আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ


আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এই ধাপগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করলে পটল চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
জমি তৈরি
ভাল জলনিকাশী ব্যবস্থা আছে এমন উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। পটল ক্ষেতে পানি নিকাশের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাটিতে পিএইচ মান ৬.৫-৭.৫ হলে ভালো হয়। চাষের আগে ২-৩ বার গভীর চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ১৫০ সেমি, চওড়া বীজতলার মতো উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি. নালা থাকবে। ১৫০ সেমি. অন্তর ৪৫, অন্তর ৪৫ সেমি. ব্যাসের ও ৩০ সেমি. গভীর গর্ত খুঁড়তে হবে। এই গর্তে পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার ১০-১২ টন/হেক্টর পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে। প্রাথমিক রাসায়নিক সার দিতে হবে।

সার প্রয়োগ
জমি তৈরির সময় পচা গোবর ১০-১২ টন/হেক্টর, ইউরিয়া ১৫০ কেজি/হেক্টর, টিএসপি ১০০ কেজি/হেক্টর এবং এমওপি ১০০ কেজি/হেক্টর মিশিয়ে দিতে হবে।
ফসলের বয়স ৩০ দিন হলে, ১০০ কেজি/হেক্টর ইউরিয়া এবং ৫০ কেজি/হেক্টর এমওপি উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সারের পরিমাণ (প্রতি গর্তে) প্রতি হেক্টরে
গোবর সার বা কম্পোস্ট -প্রতি হেক্টরে ২.২৫-৫ কেজি,।
ইউরিয়া -প্রতি হেক্টরে ২০ গ্রাম।
সুপার ফসফেট -প্রতি হেক্টরে ৭০ গ্রাম।
মিউরেট অব পটাশ -প্রতি হেক্টরে ২০ গ্রাম।
মোট সারের পরিমাণ
গোবর সার বা কম্পোস্ট -প্রতি হেক্টরে ১৫ টন।
নাইট্রোজেন - প্রতি হেকএর ৪০ কেজি,।
ফসফেট -প্রতি হেক্টরে ৫০ কেজি.।
পটাশ -প্রতি হেক্টরে ৫০ কেজি.।

পটলের বংশ বিস্তার


বীজ, লতা ও শেকড়ের টুকরো লাগিয়ে বংশ বিস্তার করা হয়। পটলের লতা লাগালে এক বছরের পুরনো ফলন্ত গাছের লতা যোগাড় করতে হবে। পটল গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল ভিন্ন গাছে থাকে। এজন্য পটলের লতা লাগাবার সময় পরাগ সংযোগের সুবিধার জন্য প্রতি ১০০টি স্ত্রী গাছের জন্য ১০টি পুরুষ গাছ লাগাতে হবে। এক হেক্টর জমির জন্যে ৬০ সেমি. লম্বা ৯০০০ লতার টুকরো লাগবে। শেকড়ের টুকরো লাগবে ৫০ কেজি.।

পটলের লতা লাগানোর নিয়ম


পটল লতা লাগানোর আগে ১৫০ সেমি. অন্তর গর্ত করে ঐ গর্তে সার দেওয়ার ৩-৪ দিন পরে লতা বসাতে হবে। প্রতি গর্তে ৭.৫ সেমি. গভীরে ১০টি স্ত্রী-লতার টুকরো পরপর লাগিয়ে ১টি করে পুরুষ-লতার টুকরো লাগাতে হবে। দুটি করে লতা প্রতি গর্তে এমনভাবে লাগাতে হবে যেন টুকরোর দু'দিকের ডগা মাটির ওপরে থাকে। 

তারপরে মাটি চাপা দিতে হবে। এইভাবে ১০টি করে স্ত্রী-লতা লাগাবার পরে ১টি করে পুরুষ লতা পুরো জমিতেই লাগাতে হবে। শেকড়ে টুকরো লাগালে ১ বছরের সরু মূল নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রতি গর্তে ২-৩টি করে বসাতে হবে। তারপর সামান্য খড় চাপা দিয়ে ২-১ দিন অন্তর অল্প অল্প পানি ছেটাতে হবে। শেকড় থেকে কচি পাতা বেরোলে খড় তুলে ফেলতে হবে।

পটলের লতা শোধন
পটলের গাছ জমিতে লাগাবার আগে লতাগুলিতে আঁটি বেঁধে ব-াইটক্স তিন গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ঐ দ্রবণের মধ্যে লতার আঁটি পাঁচ মিনিট ডবিয়ে তুলে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।

পটলের পরবর্তী পরিচর্যা


পটল লতা লতানো শুরু করার আগেই নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে খড় দিয়ে ঝাঁপ (আচ্ছাদন) দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচায় জন্মের বেলায় গাছ লতানো শুরু করলে ৯০-১২০ সেমি. উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে মাচা চওড়ায় ১৫০ সেমি.-এর বেশি না হওয়াই ভালো।

চাপান সার
জমিতে গাছ লতিয়ে গেলে ও খড়ের ঝাঁপ দিলে গাছের গোড়ায় সার দেওয়ার অসুবিধা হয়। এজন্যে ২০ গ্রাম ইউরিয়া প্রতি লিটার পানিতে গুলে গাছের পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। মাচার চাষে সরাসরি মাদায় ১০ গ্রাম হিসেবে ইউরিয়া প্রথম বার চাপান সার, লতা লাগানোর ছয় সপ্তাহ পরে এবং একই পরিমাণ ইউরিয়া ১০ সপ্তাহ পরে চাপান সার হিসেবে দিতে হবে।

পটলের জমিতে পানি সেচ


প্রথম সেচ ২০ দিন পর এবং পরবর্তী সেচ ১৫-২০ দিন অন্তর দিতে হবে। মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে ৩-৪ দিন অন্তর হালকা সেচ দিলে গাছের বাড় ভালো হয় এবং ফুল-ফল ঠিকমতো ধরতে পারে। জমিতে যেন পানি না জমে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দেওয়ার জন্য ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পটল চাষে ফল ধরা সমস্যা


পুরুষ গাছের সংখ্যা কম থাকলে স্ত্রী-ফুলের পরাগমিলন ঠিকমতো হয় না। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী-ফুল হলদে হয়ে যায়। এজন্যে খুব ভোরে সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল থেকে রেণু যোগাড় করে সদ্য ফোটা স্ত্রী-ফুলের গর্ভমুণ্ডে ভালোভাবে লাগাতে হবে।
হরমোন জাতীয় ওষুধের ব্যবহার
প-্যানোফিক্স ১ মিলি. হারে ৪.৫ লিটার পানিতে গুলে গাছে স্প্রে করলে ফলের আকার বড় হয়, ফল বেশি ধরে এবং ফলনও বাড়ে।

পটলের মুড়ি ফসল


শীতের শেষে গাছ শুকিয়ে গেলে সার, গাছের গোড়ার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিলে আবার চৈত্রের মাঝামাঝি নতুন পাতা বেরুবে ও ফল ধরবে। তিন বছরের বেশি এভাবে গাছ রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায় না।
সম্ভাব্য ফলন
প্রথম বছর ফলন কম হয়। পরবর্তী বছর থেকে বেশি ফলন পাওয়া যায়। প্রথম বছর ফলন প্রতি হেক্টরে ৭-৮ টন। দ্বিতীয় বছর প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ টন। লতা বসানোর পর ১৪০-১৫৬ দিনে প্রথম ফুল দেখা যায়। ফুল ফোটার পর থেকে কচি ফল তৈরি হতে ৭-১০ দিন সময় লাগে। গাছ প্রতি ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url