কাজুবাদাম গাছের রোগ এবং পোকা (Diseases and pests of Cashewnut) দমন ব্যবস্থা

কাজুবাদাম গাছের পোকা (Insect pests) ও দমন ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
কাজুবাদামের রোগ এবং পোকা (Diseases and pests of Cashewnut) দমন ব্যবস্থা
এই আর্টিকেলে আরো আলোচনা করছি ডগা শুকা রোগ এর দমন ব্যবস্থা এবং কাণ্ড ও শিকড় ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

কাজুবাদামের শাঁস ছাড়ানো ও বাজারে প্রেরণ (Processing & marketing)


সংগ্রহের পর ফলের কয়েকটি বিশেষ পরিচর্যা করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। কাজুবাদামে শাঁস ছাড়ানো কাজটি কারখানায় (Factory) করা হয়। কুইলনের (ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন) ধারেকাছে ১০০টির বেশী, মাদ্রাজ রাজ্যের ম্যাঙ্গালোর ও তানজোর, উড়িষ্যায় এবং মেদিনীপুরের কাঁথি ও ঝাড়গ্রাম এলাকায় কয়েকটি এ ধরনের কারখানা আছে। কাজুবাদামের তিনটি বিভিন্ন অংশ থেকে তিন প্রকার ব্যবহার্য পদার্থ পাওয়া যায়। যথাঃ
  • (১) কাজু আপেল (Cashew apple): ফলের শক্ত খোলার উপরে শাঁসালো নরম লাল অংশটিকে কাজু আপেল বলা হয়। পাকার পর এটি কষায়যুক্ত মিষ্ট স্বাদের হয়। এটি ভেষজ শিল্পে বা পানীয় তৈরী করতে ব্যবহৃত হয়।
  • (২) শক্ত খোলা (Hard Shell): বীজের উপরে শক্ত খোলা থাকে। এ থেকে এক প্রকার তেল পাওয়া যায় এবং তা নানান শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
  • (৩) বাদাম (Kernel): খোলার ভেতরের অংশই বাদাম। শক্ত খোলাটিকে ফাটিয়ে বাদাম বের করা হয়। বাদাম খাদ্য হিসাবে খুবই মূল্যবান। কাজুবাদামের খোসায় যে তেল থাকে তা শরীরে লাগলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
তাই বাদাম ছাড়াবার আগে তেল বের করা বা নষ্ট করার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। কাজুবাদামের শাঁস ছাড়ানো কাজটি কতিপয় প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে সম্পন্ন করা হয়। যেমনঃ ঝলসানো, গরম বালিতে বা লোহার কড়াইয়ে বা মাটির হাড়িতে ঝলসানো।

কাজুবাদাম গাছের রোগ (Diseases) ও দমন ব্যবস্থা (Control measures)


ডগা শুকা রোগ (Die back or pink disease) C.O. Corticum salmonicolor (Pellicularia salmonicolor)
কাজুবাদামের ছত্রাকঘটিত এ রোগটি বর্ষাকালে দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ (Symptoms)
গাছের আক্রান্ত শাখার ছালে প্রথমে সাদা ছোপ দেখা যায়। পরে ছাল আলগা হয়ে যায়। গাছের শাখা লাল হয়ে যায় এবং পরে আক্রান্ত শাখা ও কুঁড়ি উপর থেকে শুকিয়ে যেতে পারে। রোগ ক্রমশঃ নীচের দিকে ছড়ায়।

ডগা শুকা রোগ এর দমন ব্যবস্থা (Control measures)


  • ১. আক্রান্ত ডালটি কেটে পুড়িয়ে দিতে হবে। কাটা অংশে বোৰ্দ্দো মলম (Bordeaux paste) লাগাতে হবে।
  • ২. বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে গাছে এক শতাংশ বোদ্দোমিশ্রণ বা কপার অক্সি-ক্লোরাইড যেমন ব্লাইটক্স (পরিমাণ: ৫ গ্রাম/লিটার জল) স্প্রে করতে হবে।
পুষ্পমঞ্জরী পচন রোগ (Inflorescence blight) C.O. Gloeosporium mangiferae. 
মেঘলা আবহাওয়ায় কাজুবাদামের এ রোগটির প্রকোপ বেশী দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পুষ্প-মঞ্জরী শুকিয়ে যায়। কাজু আপেল আক্রান্ত হলে প্রথমে গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে ও পরে পচে ঝরে যায়।

পুষ্পমঞ্জরী পচন রোগ এর দমন ব্যবস্থা (Control measures)


রোগাক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে দিতে হবে এবং সমস্ত গাছে ছত্রাক নাশক ঔষধ (যেমনঃ ব্লাইটক্স) স্প্রে করতে হবে।

কাজুবাদাম গাছের পোকা (Insect pests) ও দমন ব্যবস্থা (Control measures)


কাণ্ড ও শিকড় ছিদ্রকারী পোকা (Stem & root borer): বৈজ্ঞানিক নাম: Plocaederus ferugineus
কাজুবাদামের এটি একটি ক্ষতিকারক পোকা।
ক্ষতির প্রকৃতি (Nature of damage)
এই পোকার কীড়া (grubs) ডিম থেকে বের হয়ে কাণ্ড ও শিকড় ফুটো করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরের অংশ কুরে কুরে খায়। ফলে গাছের খাদ্য চলাচলে অসুবিধা হয়। গাছের মাটির কাছাকাছি অংশে ছোট ফুটো দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে খসে পড়ে। শাখা-প্রশাখা শুকিয়ে যায় ও পরে গাছটি মরে যায়।

কাণ্ড ও শিকড় ছিদ্রকারী পোকা দমন ব্যবস্থা (Control measures)


  • ১. গাছের কাণ্ডে ফুটো দেখা দিলে তুলোতে কেরোসিন লাগিয়ে ফুটোগুলো বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
  • ২. গাছের কাণ্ডের ফুটোর মধ্যে ফোরেটক্স দানা (গাছ প্রতি ১০ গ্রাম) বা জিঙ্ক ফসফাইড (গাছ প্রতি ১-২টি বড়ি) প্রয়োগ করেও পোকা মারা যায়। তাছাড়া গাছের গোড়ায় দানাদার ঔষধ (যেমন ফিউরাডন, ফোরেট, থাইমেট ইত্যাদি) প্রয়োগ করেও এদের দমন করা যায়।
  • ৩. পোকার আক্রমণ মারাত্মক হলে গাছকে বাঁচানো যায় না। এক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছকে কেটে নষ্ট করে দেওয়াই ভাল।
পাতায় সুড়ঙ্গকারী পোকা (Leaf miner): বৈজ্ঞানিক নাম: Acrocercops syngramma.
কাজুবাদাম গাছে নতুন পাতা আসার সময় এই পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকার কীড়া কচি পাতার আস্তরণের নীচে সুড়ঙ্গ তৈরী করে এবং পাতার দারুণ ক্ষতি করে।

পাতায় সুড়ঙ্গকারী পোকা দমন ব্যবস্থা (Control measures)


প্রতি লিটার জলে ২ মিলি ফেনিট্রোথায়ন (যেমন সুমিথায়ন-৫০ ই-সি, ফলিথায়ন ইত্যাদি) বা এনডোসালফান (যেমন থায়োডান ৩৫ ই-সি ইত্যাদি) গুলে কচি পাতা বের হবার সময় গাছে স্প্রে করতে হবে।
পাতা খেকো পোকা (Leaf eating caterpillar)
বৈজ্ঞানিক নাম: Cricula trifenestrata.
এই কীটের শুঁয়োপোকা কাজুবাদাম গাছের পাতা খেয়ে নির্মূল করে দেয়। আক্রান্ত গাছের শুধু ডাঁটাগুলো থেকে যায় ও গাছ ন্যাড়া মনে হয়।

পাতা খেকো পোকা দমন পদ্ধতি


প্রতি লিটার জলে ২ মিলি ফেনিট্রোথায়ন (যেমন সুমিথায়ন-৫০ ই-সি, ফলিথায়ন ইত্যাদি) বা এনডোসালফান (যেমন থায়োডান ৩৫ ই-সি ইত্যাদি) গুলে কচি পাতা বের হবার সময় গাছে স্প্রে করতে হবে।

কাজুবাদামের জাত (Varieties)


কাজুবাদামের নির্দিষ্ট জাত প্রকরণ দেখা যায় না। তবে বর্তমানে কয়েকটি সঙ্কর জাত (hybrid) সৃষ্টি হয়েছে। যথাঃ এইচ-৩-১৭, এইচ-৩-১৯, এইচ-৪-৭, এইচ-৩-৭, এইচ-৩-১২, নং-৫, ১১,

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url