ব্রকলির পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা

ব্রকলির পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা এবং ব্রকলির কাটুই পোকার প্রতিকার সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ব্রকলির পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করছি ব্রকলির পোকা দমন ব্যবস্থাপনা এবং ব্রকলির কাটুই পোকার আক্রমণ। এছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক আলোচনা করা হয়েছে সেইগুলো জানতে হলে আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা


ব্রকলি চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই একটি সাধারণ সমস্যা। সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে এটি ফসলের উৎপাদনশীলতা এবং গুণমান কমিয়ে দিতে পারে। এখানে ব্রকলির পোকামাকড় এবং রোগবালাই সম্পর্কিত কিছু সাধারণ সমস্যা এবং তাদের ব্যবস্থাপনা কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ব্রকলির জাব পোকার আক্রমণ


  • (ক) জাব পোকা একটি অন্যতম প্রধান ক্ষতিকারক পোকা।
  • (খ) অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্ত বয়ষ্ক উভয় অবস্থাতেই দলবদ্ধভাবে গাছের নতুন ডগা, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নীচের দিকে কোকড়ানো দেখা যায়।
  • (গ) জাব পোকা মধুর মত এক প্রকার রস নিসৃত করে। এই রস পাতা ও কান্ডে সুটিমোল্ড নামক এক প্রকার কালো রংয়ের ছত্রাক জন্মায়।
  • (ঘ) মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাব পোকার বংশ বৃদ্ধি বেশী হয় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

ব্রকলির পোকা দমন ব্যবস্থাপনা


  • ফসল সংগ্রহের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা এবং পরে জমি ভাল করে চাষ করা।
  • আক্রান্ত পাতার পোকা ২-৩ বার হাতে ধরে মেরে ফেললে এই পোকা অনেকাংশে দমন করা সম্ভবপর হয়।
  • পিঁপড়া এবং মাকড়সা এ পোকার কীড়া খায়। সব রকমের বোলতা যেমন ট্রাইকোগ্রামা, কোটেসিয়া ইত্যাদি এই পোকার ডিম ও কীড়াকে ধ্বংস করে ফেলে। তাই এদের সংরক্ষণ করা উচিত।
  • জমি জরিপ করে যদি প্রয়োজন হয় তখন সঠিক নিয়মে অনুমোদিত কীটনাশক ঔষধ যেমন-
  • ম্যালাটাফ/লিমিথিয়ন ২ মিঃলি: প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
  • নিম বীজের দ্রবন (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবনা গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।
  • লেডীবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ পোকা ও কীড়া এবং সিরফিড্ মাছির কীড়া জাব পোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
  • আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী বিষক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পিরিমর সীমাছিও পরাগায়নে সাহায্যকারী পোকাদের জন্য অনেকটা নিরাপদ।

ব্রকলির কাটুই পোকার আক্রমণ


চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। 
  • এ পোকা সাধারণত চারা গাছের ক্ষতি করে থাকে।
  • দিনের বেলা কাটুই পোকার কীড়া মাটির ফাটলে, মাটির ঢেলায় এবং আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
  • পোকা রাতের বেলা বের হয়ে ব্রকলির চারা গাছ কেটে ফেলে। 
  • ভোর বেলা ক্ষেতে কাটা গাছের কাছে মাটি খুঁড়লে কাটুই পোকার কীড়া দেখতে পাওয়া যায়।
  • কাটুই পোকার ব্যাপক আক্রমণে জমিতে ব্রকলির গাছের সংখ্যা কমে যায় বলে স্বাভাবিকভাবে ফলনও কম হয়।

ব্রকলির কাটুই পোকা আক্রমণের লক্ষণ


পাতায় বাদামী রঙের চক্রাকার দাগ পড়ে। দাগগুলো অসম আকারের হয়ে থাকে। ফলে অসংখ্য ছোট ছোট কালচে দাগ দেখা যায়।।
অধিক আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়।
আক্রান্ত ফসলের বীজ পরিপুষ্ট না হয়ে চিটা হয় এবং ফলন কমে যায়।

ব্রকলির কাটুই পোকার প্রতিকার


  • ভোর বেলা কাটা চারার গোড়ার মাটি খুঁড়ে কীড়াগুলো মেরে ফেলা।
  • টর্চ বা হারিকেন নিয়ে রাতের বেলা কাটুই পোকার কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলা।
  • ক্ষেতে সেচ দিলে মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা কীড়া মাটির উপরে উঠে আসে। ফলে সহজে পাখি এদের ধরে খায় এবং হাত দিয়ে মেরে ফেলা যায়।
  • বিষটোপ দিয়ে এপোকা দমন করা যায়। বিষটোপ হিসেবে শতাংশ প্রতি ২ গ্রাম সেভিন/কার্বোরিল ৮৫ পি অথবা পাদান ৫০ এসপি, ৪০০ গ্রাম গম বা ধানের কুঁড়ার সাথে পরিমাণমত পানিতে মিশিয়ে এমন একটি বিষটোপ তৈরি করতে হবে যা হাত দিয়ে ছিটানো যায়। এ বিষটোপ সন্ধ্যাবেলা আক্রান্ত ক্ষেতে চারাগাছের গোড়ায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে কাটুই পোকার কীড়া দমন সহজ হয়।
  • এছাড়া সুষম সার ও নিয়মিতসেচের ব্যবস্থা করা।
  • উপযুক্ত শস্য পর্যায় অবলম্বন করা।
  • অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে গাছে ১০-১২ দিন অন্তর স্প্রে করা।
  • বোরনের অভাবে বাদামী পচন (Brown spot) রোগ হয়। বোরেট প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ব্রকলির পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা


অন্যান্য ফসল বা শাক সবজির মত ব্রকলিও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। তবে ব্রোকলি বেশিরভাগ সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এই পোকা আক্রমণের লক্ষণ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে জানানো হলো।
  • এ পোকা কচি পাতা, ডগা ও কপি খেয়ে নষ্ট করে।
  • পাতার উপরের ত্বক বা সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে সে সব অংশ ঝাঝরা হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত পাতা সবুজ রং বিহীন জালের মত দেখায়। ব্যাপক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে মরে যায়।
  • কচি গাছের বর্ধনশীল অংশে এই পোকার আক্রমণ বেশী পরিলক্ষিত হয়।
  • আক্রান্ত ব্রকলি খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়।
  • এদের ব্যাপক আক্রমণে ব্রকলি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে।
  • প্রতিবার একই স্থানে ব্রকলি না লাগিয়ে অন্য ফসল চাষ করা।
  • নিয়মিত মাটি এবং সেচের পানি পরীক্ষা করা।
  • কম্পোস্ট এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ ব্যবহার করা।
  • গাছের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পোকা ও রোগ দেখা মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া।
সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করলে ব্রকলির পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url