স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ - স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কৌশল

 আমরা জানি স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এখানে আপনি স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কিভাবে স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কৌশল এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেল পড়তে হবে।

স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ
আপনি কি নিজে স্ট্রবেরি চাষ করতে চান? শুরু করবেন কিভাবে তার সঠিক নিয়ম জানেন না।স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে খুঁটিনাটি আমরা সকল তথ্য জানবো। এই আর্টিকালে আমরা আরো আলোচনা করছি টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি এবং স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়। এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

ভূমিকা


 সাধারণত শীতকালের ফল প্রচন্ড শীতে স্ট্রবেরি চাষ ভালো হয়। স্ট্রবেরি চাষ করতে কোন প্রকার সাড়ে প্রয়োজন হয় না আমরা খুব সহজেই স্টকরে চাষ করতে পারি। স্ট্রবেরি একটি দামি ফল বাড়িতে সামান্য জায়গায় এই স্ট্রবেরি আমরা চাষ করতে পারি। স্ট্রবেরি থেকে আমরা দুই ধরনের গাছ উৎপন্ন করে থাকে। একটি হলো চারা থেকে আর একটি হলো গাছের রানার থেকে।

শীত প্রধান অঞ্চলে স্ট্রবেরি মূলত উৎপন্ন হয়। কিন্তু কিছু যাতে নতুন মুলক তাপ গ্রীষ্মতেও উৎপন্ন হয় দিন ও রাত যথাক্রমে ২০ থেকে ২৬ ডিগ্রি ও ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এই গাছ রোপন করা যায়। ফুল ও ফল আসার সময় শুষ্ক আবহাওয়া আবশ্যক। উর্বর দো-আশ থেকে বেলে দো-আস মাটি তে স্ট্রবেরি চাষের জন্য উত্তম। উচ্চফলনশীল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চাষের জন্য উপযোগী স্ট্রবেরি জাত।

স্ট্রবেরি বীজ বপনের সময়


স্ট্রবেরি বীজ বপনের মূল সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত। এই সময় যদি চারা রোপন করা হয় তাহলে গাছগুলো খুব স্বাস্থ্যকর হয়। যদি আমরা অক্টোবর মাসে প্রথমদিকে চারা রোপণ করতে পারি তাহলে সে গাছগুলো বেশ স্বাস্থ্যকর বা হেলদি হয়। এই চারা থেকে আমরা বেশ ভালো স্ট্রবেরি পেতে পারি।

স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কৌশল


কিভাবে খুব সহজেই স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়।পাকা স্ট্রবেরি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে সেখান থেকে কালো কালো বীজ সংরক্ষণ করব। এই বীজগুলো একটি প্লাস্টিক কন্টেইনারে নিয়ে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিব। তারপর একটি টিস্যু পেপারে বীজগুলো রেখে দিব।এই টিস্যু পেপারটি ছোট্ট একটা প্লাস্টিক কন্টেনারে স্থাপন করবো।
এরপর একটি স্পেয়ার মেশিন দিয়ে পানি দিয়েবীজগুলোর ওপর স্প্রে করব।এই কনটেন্টটি একটি প্লাস্টিক ‍র‍্যাপিন পেপার দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থলে রাখবো। ৫ দিন পর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বীজগুলো তেমন কোন পরিবর্তন হয় নাই। কিন্তু ১১ দিন পর বেশ কয়টি বীজ অলরেডি অঙ্কুর দমন করেছে।

 যেগুলোর মধ্যে পাতা এবং শিকড় চলে আসছে।সেই পাতা এবং শিকড় আরো ভালোভাবে ঘটনার জন্য একটিকোকোডাস্ট অথবা মাটির উপর এটি স্থাপন করব। কিছু অতিরিক্ত মাটি এর উপর দিয়ে পানি স্প্রে করব।১৩ দিন পর আমরা দেখতে পাবো যে বেশ কয়েকটি পাতা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।২৩ নম্বর দিনে আমরা আরো ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছি যে তারা গুলো আরো বেশ বড় হয়েছে।এই টাড়াগুলো আমরা একটি টবে স্থাপন করতে পারব।এইভাবে আমরা খুব সহজে স্ট্রবেরি চারা উৎপাদন করতে পারব।

স্ট্রবেরি চারা বপন পদ্ধতি


স্ট্রবেরি চারা উৎপাদনে পূর্ববতী বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ মিশে ছায়াযুক্ত স্থানে রোপন করতে হবে ওই গাছের রানের শিকড় বের হলে তা কেটে ৫০ ভাগ গবর ও ৫০ ভাগ পলিমার যুক্ত করে পলিথিন ব্যাগে লাগাতে হবে। পলিথিন ব্যাগ গুলো হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।বাংলাদেশ আবহাওয়া স্ট্রবেরি আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে রবি মৌসুমি চাষে উপযোগী।

স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা


স্ট্রবেরি গাছের ক্ষেত্রে আমরা দুই ধরনের গাছ দেখতে পাই একটি হলো সুইট চারলি গাছ আর একটি গাছ হল থিয়োগা।সুইট চালি গাছ খুবই ভালো হয় এটি ফলের সাইজ একটু বিকৃত এটি খেতে খুব মিষ্টি। এই গাছটি সহজে নষ্ট হয় না। এই গাছটি দ্রুত বংশ বিস্তার করে আর খুব তাড়াতাড়ি রানার্সারে। থিয়োগা গাছটির ফল একটু বড় হয় এ গাছের ফল অনেক বেশি ধরে এটি খেতে একটু টক।

 স্ট্রবেরি গাছের রোগ এবং পোকা আক্রমণ সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা দরকার সাধারণত একটি পোকা আক্রমণ করে সেটি হল যাক পোকা । যাক পোকা যদি আক্রমণ করে তাহলে নিম অয়েল স্প্রে করতে হবে। নিম অয়েল স্প্রে করলে জাক পোকা চলে যায়।যখন ফল লাল হওয়া শুরু করবে তখন লাল মাকড়া আক্রমণ করে এ সময় আমরা নিমওয়েল স্প্রে করতে পারি। এভাবে যদি আমরা স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা করতে পারি তাহলে আমাদের স্ট্রবেরি গাছের অনেক বেশি ফল ধরবে।

টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি


স্ট্রবেরি ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমন তেমনি সুস্বাদু। ভিটামিন সি এবং আয়োডিন সমৃদ্ধ এই ফল খুব সহজে টবে চাষ করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে স্ট্রবেরি চাষ টবে করতে পারি। টবে ঠিক মাঝখানের এক থেকে দেড় ইঞ্চি গভীরতা করে এর একটি স্ট্রবেরি চারা বসাতে হবে। 
স্ট্রবেরি চারা বসানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে সঠিক পর্যায়ে স্ট্রবেরিটি বসানো হয়েছে কিনা। স্ট্রবেরি গাছের যেখান থেকে পাতাবের হয় সেটা যেন মাটিতে ঢুকে না যায়। যদি এটা মাটির ভিতরে ঢুকানো থাকে তাহলে সেখান থেকে স্ট্রবেরি গাছটি পচে যাবে বা শুকিয়ে যাবে।স্ট্রবেরি চারা অবশ্যই নার্সারি থেকে ভালো জাতের স্ট্রবেরি চারা নিতে হবে।

স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়


স্ট্রবেরি ওঠা শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া এপ্রিল ও স্টোরি ও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা তিন ধরনের স্ট্রবেরি উদ্ভাবন করেছেন এগুলো হচ্ছে বারি -১,বারি-২ এবং বারি-৩। বারি-১ স্ট্রবেরি রোপনকৃত হয় ভাদ্র মাসে মাঝে মাঝে অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শুরুতে এর ফল সংগ্রহ পৌষ মাসে শুরুতে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে ।

স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ


স্ট্রবেরিতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তার মধ্যে ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরিতে যেসব পুষ্টি উপাদান আছে সেগুলো হলঃ ক্যালসিয়াম ১৩.৮৯, ম্যাগনেসিয়াম ৯.৭২, ভিটামিন সি ৫৭.০০, শর্করা ৭.০১, আমিষ ০.৬১, লৌহ ০.৩৮, চর্বি ০.৩৭, পটাশিয়াম ১৬.৭,ভিটামিন এ ২৭, নিয়াসিন ০.২৩মিলিগ্রাম করে আন্তর্জাতিক একক। মিশ্র ফল হিসাবে স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ আমরা ব্যবহার করে থাকি। স্ট্রবেরি পিউরিক আমরা ফ্রিজে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারি।

স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


উপকারিতাঃ স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পলিফ্যান্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। হার্টের ধমনীর জন্য স্ট্রবেরি থাকা উপাদান গুলো খুবই উপকারী। এটি হার্টের ধমনী ভালো রাখে । মানুষের শরীরের ক্ষতি কর ফ্যাট এলডিএল কমায় স্ট্রবেরি খেলে। একটা বাড়িতে প্রচুর খাইবার থাকার কারণে ডায়াবেটিস ও কোর্সটি কোনটা দূর করতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

নিয়মত স্ট্রবেরি খেলে চুল পড়া রোধ করে এবং এটি চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ মধ্যে গ্লাইসেমিক ইন্ডোক আছে তাই রক্তের শর্করা মাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। স্ট্রবেরি রক্তের ক্লোস স্টোর কমাতে সাহায্য করে নামক এক উপাদান থাকায় যা শরীরে খারাপ কোলেস্টরে মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে এবং চোখের ছানি পড়া রোধ করতে স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ অনেক উপকার করেরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যদি আমরা নিয়ম মত স্ট্রবেরি খাই স্তবডিতে ভিটামিন সি আছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।একটি গবেষণা দেখা গেয়েছে স্ট্রবের মধ্যে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য যা ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা কার্যক করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্ট্রবেরি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

  • অপকারিতাঃ অতিরিক্ত মাত্রা স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে হিমক্রমাটোসিস এখন তো রোগীদের অবস্থা খারাপ হতে পারে ।
  • স্ট্রবেরি তে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত মাত্রা খাওয়ার ফলে গ্যাস ডাইরিয়া অবলম্বন হতে পারে।
  • অতিরিক্ত স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে শরীরে পটাশিয়ামের বৃদ্ধি পায় ফলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • শর্করা এবং এসিড থাকায় অতিরিক্ত স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে দাঁতে ক্ষয় হতে পারে ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধ অনুসরণ করা এবং ক্ষতি কমাতে নিয়ে মতে দাঁতের যত্ন বজায় রাখুন ।
  • আমরা স্ট্রবেরিতে অনেক কীটনাশক ব্যবহার করি ফলে এটি ভালোভাবে না ধুয়ে খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে ।
  • এলার্জি হতে পারে স্ট্রবেরি থেকে আমবাগ চুলকানি কিংবা ফুলে যাওয়া মত প্রক্রিয়া অনুভব করতে পারি আপনি যদি এনার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে স্ট্রবেরি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ওজন কমাতে সাহায্য করে


লেপিটিন এবং আডিপনেটটিন উপাদান স্তবটিতে থাকায় চর্বিবান করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজ হ্রাস এবং ক্ষুধা হ্রাস এসব উপাদান শরীরের ওজন ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে । গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ এর মধ্যে গ্লাই এস এমিক ইনডেক্সে কম থাকায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে এছাড়াও স্ট্রবেরি খেলে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ করে। 

স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ হিসাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে স্ট্রবেরি চা অনেক উপকারী । ফাইবার থাকায় স্ট্রবেরিতে মেটাবলিকম বাড়তে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিঅক্সাইড, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ভরপুর স্ট্রবেরিতে।

লেখকের মন্তব্য


স্ট্রবেরি থেকে স্ট্রবেরির বীজ ও চারা উৎপাদন কিভাবে করা হয় সে দিক গুলো আমরা এই আর্টিকালে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছি। আমরা যদি স্ট্রবেরি গাছ ভালোভাবে পরিচর্যা করি তাহলে সেখান থেকে অনেক স্ট্রবেরি ফল পাওয়া যাবে এতে অনেক লাভজনক হবে। স্ট্রবেরি যেমন দেখতে সুন্দর তেমন এটি সুস্বাদু, স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ একটি ফল।

আজ আমরা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা এবং কিভাবে স্ট্রবেরি চারা রোপন করতে হয় এ সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছে। স্ট্রবেরি খেতে কেমন হয় স্টোরি তে কত রকম ভিটামিন আছে এটা এ সম্বন্ধে আমরা জেনেছি। যদি কোন সমস্যা থাকে আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক উপকার করবে ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেল ভালো লেগে থাকে তাহলে ওয়েবসাইটে কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url