আপওয়ার্কে কাজের আবেদন - আপওয়ার্কে কভার লেটার লেখা
আপওয়ার্কে কাজের আবেদন এবং আপওয়ার্কে কভার লেটার লেখা এ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা আরো আলোচনা করছি আপওয়ার্কে সফল হওয়ার টিপস এবং আপওয়ার্ক থেকে টাকা উত্তোলন পদ্ধতি। এছাড়া আরও আলোচনা করছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক এর সম্বন্ধে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
আপওয়ার্ক নিয়ে বিস্তারিত
বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় মার্কেট প্লেসের নাম- আপওয়ার্ক। এখানে বায়াররা বিভিন্ন কাজ নিয়ে জব পোস্ট করেন। কাজ করতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করেন। এসব বিড দেখে বায়াররা তাদের কাজের জন্য যোগ্য লোককে বাছাই করেন। আপওয়ার্কে একবার কাজ পেয়ে গেলে আর পেছনে ফিরতে হয় না। আপওয়ার্কে একজন বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পেলে অন্য বায়াররা ওই সেলারকে খুব সহজেই বিশ্বাস ও কাজের যোগ্য মনে করেন। এই মার্কেট প্লেসের ওয়েবলিংকঃ
www.upwork.com
আপওয়ার্কে যেসব কাজ পাওয়া যায়
ওয়েব ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এসইও, অনলাইন মার্কেটিং, মোবাইল অ্যাপস, রাইটিং ও ট্রান্সলেশন, সেলস ও মার্কেটিং, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট।
আরো পড়ুনঃ প্যাসিভ আয়ের কৌশলগুলি
কাজের ধরন
আপওয়ার্কে দুভাবে কাজ করা যায়। একটি হচ্ছে ফিক্সড- অর্থাৎ কাজ শেষে বায়ার চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করেন। অপরটি হলো আওয়ারলি- অর্থাৎ আপওয়ার্ক একটা বিশেষ সফটওয়্যার দ্বারা ফ্রিল্যান্সারদের কাজের হিসাব রাখে এবং বায়ারকে সময়মতো কাজের স্ক্রিনশট দিয়ে কাজ সম্পর্কে অবহিত করে। এ ধরনের কাজ ঘণ্টা হিসাব করে করা হয়, যত ঘণ্টা কাজ করা হবে বায়ার তত ঘণ্টার ডলার পেমেন্ট করবেন।
আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট চালু করা এবং পরিপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি
আপওয়ার্কে কাজের জন্য আবেদন করতে চাইলে সেখানে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ই-মেইল আইডির মাধ্যমে ভ্যারিফাই করে অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে হয়। অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় সাইনআপ ফর্মে সঠিক তথ্য দিতে হয়। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে নিজের প্রোফাইলকে প্রফেশনাল স্টাইলে সাজিয়ে নিন।
প্রোফাইল পিকচার হিসেবে একটি স্পষ্ট এবং হাসি-খুশি ছবি বাছাই করুন। ইতিমধ্যে যে কাজগুলো আপনি করেছেন, সেগুলো প্রোফাইলে উদাহরণস্বরূপ যুক্ত করে রাখতে পারেন এবং যে কাজে আপনি দক্ষ, সেই কাজের যদি কোনো সনদ থাকে তাহলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন। এটি করলে আপনি সহজেই বায়ারের আস্থাভাজন হতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ব্যবসা করে কোটিপতি
টাইটেলে আপনি যে কাজ করতে চান, সেগুলো ভালোভাবে উল্লেখ করুন; যাতে যেকোনো ব্যক্তিই বুঝতে পারেন আপনি কোন কাজগুলোতে দক্ষ। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটাই প্রথমে বায়ার আপনার নামের সাথে দেখতে পারবেন। এটা দেখে পছন্দ করলে আপনার বাকি প্রোফাইল দেখতে আগ্রহবোধ করবেন। ওভারভিউ সুন্দর করে লিখবেন।
কপি-পেস্ট করা যাবে না। নিজে লিখলে সবচেয়ে ভালো হয়। যদি না হয় অন্য কোথাও থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। এখানে যেসব বিষয়ে আপনি দক্ষ, সে বিষয়গুলো যোগ করতে পারেন। সর্বনিম্ন পাঁচ ডলার করবেন, তা-ও প্রথম ফিডব্যাক পর্যন্ত। এরপর বাড়াতে থাকবেন। স্কিল টেস্ট ছাড়া প্রোফাইল শতভাগ করা যাবে না। এর জন্য স্কিল টেস্ট দিতে হয়। যার যে বিষয়ের ওপর জ্ঞান আছে এবং যে বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তিনি সেই বিষয়ের ওপর স্কিল টেস্ট দিতে পারেন। স্কিল টেস্টে ভালো করলে সেটিকে প্রোফাইলে প্রদর্শন করাবেন। তাতে প্রোফাইল শক্তিশালী ও প্রফেশনাল হবে।
আপওয়ার্কে কাজের আবেদন
জবে ক্লিক করলে যে কাজটি ক্লায়েন্ট আপনাকে দিয়ে করাবেন সেটির বর্ণনা আসবে। আপনার পক্ষে কাজটি করা সম্ভব কি না, সেটি ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিন। কাজটির ধরন কী? ঘণ্টাভিত্তিক হলে লেখা থাকবে আওয়ারলি, ফিক্সড হলে লেখা থাকবে ফিক্সড। তারপর থাকে কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, কাজটি কবে পোস্ট হয়েছে আরও অনেক কিছু আছে।
পড়ে বুঝে নিতে হবে বাকিটুকু। কাজটি করার জন্য ক্লায়েন্ট কী রকম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক চাচ্ছেন, সেটা জানা যাবে। যেমন 'ফিডব্যাক স্কোর' ক্লায়েন্ট চায়। আপওয়ার্কে কাজ পাওয়ার জন্য কিছু বিষয়ে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, এর মধ্যে-
১. আপওয়ার্কে কাজের জন্য আবেদন করাটাকে বিড বলা হয়। আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য নির্দিষ্ট ৩০টি বিড করার কোটা আছে। অর্থাৎ এক মাসে ৩০টা কাজের জন্য আবেদন করা যায়। সুতরাং এ কোটাগুলো ভালোভাবে বুঝে ব্যবহার করবেন। শুধু শুধু বিড করে কোটা অপচয় করে লাভ নেই। তা ছাড়া অতিরিক্ত বিড কেনাও যায় না।
২. যে কাজটির জন্য বিড করবেন, তার বর্ণনা ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিন। যে কাজে বেশি বিড হয়নি, সেগুলোতে বিড করবেন, এতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যদি আপনার প্রোফাইল নতুন হয়, তাহলে এ নিয়মটি আপনাকে ভালোভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনলাইনে বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে ক্লায়েন্ট আপনাকে কোনো কারণে মেসেজ দিলে তার উত্তর দিতে দেরি না হয়।
৪. বিড করার আগে অবশ্যই ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করে নেবেন।
ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ করবেন- (ক) ক্লায়েন্ট এখন পর্যন্ত কত ঘণ্টা কাজ করিয়েছেন, (খ) ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভ্যারিফাইড কি না, (গ) যে টাইপের কাজ বিড করছেন, ওই টাইপের কাজ ক্লায়েন্ট আগে করিয়ে থাকলে সেটা কত রেটে করা হয়েছে, সেটা খেয়াল করবেন। এবং সেই অনুযায়ী বিড করবেন। বিড করার জন্য কভার লেটার লাগবে।
আপওয়ার্কে কভার লেটার লেখা
কভার লেটার ইংরেজিতে লিখতে হয়। এ জন্য ইংরেজিতে মোটামুটি জ্ঞান থাকা আবশ্যক। খুব সুন্দর ইংরেজি ব্যবহার করে, বড় কোনো কিছু লেখাকে ভালো কভার লেটার বলে না। সম্ভব হলে ক্লায়েন্টকে এক লাইনে লিখুন যে কাজটি আপনি পারবেন। তাহলে ক্লায়েন্ট সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। ক্লায়েন্টের সময়ের মূল্য আছে। বড় কভার লেটার এবং কটমটে ভাষায় লেখা
কাজ শুরু করুন
বায়ার যদি কাজের জন্য আপনাকে নির্বাচন করেন তাহলে তিনি আপনার ইন্টারভিউ নেবেন। তিনি যদি মনে করেন, আপনি কাজটি পাওয়ার যোগ্য তাহলে কাজটি পেতে পারেন। ঘণ্টাভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে আপওয়ার্ক থেকে আপওয়ার্ক টিম সফটওয়্যারটি ডাউনলোড দিয়ে আপনি যে কম্পিউটারে কাজ করবেন সেটাতে ইনস্টল করে নিন।
এবার কাজ শুরুর আগে কাজটি সিলেক্ট করে স্টার্ট বাটনে ক্লিক করুন। দেখতে পাবেন, কাজের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। সফটওয়্যারটি কিছুক্ষণ পরপর আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনশট নেবে, সাথে সাথে সেটা আবার ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দেবে। কাজ শেষ হলে বায়ার যখন আপনাকে পেমেন্ট দিয়ে চুক্তি শেষ করবেন, তখন আপনার কাছে একটি নোটিফিকেশন আসবে।
আরো পড়ুনঃ প্যাসিভ ইনকামের আইডিয়া
এরপর বায়ার আপনার সম্পর্কে ফিডব্যাক দেবেন, সেখানে বায়ার সম্পর্কে আপনাকেও ফিডব্যাক দিতে হবে। পূর্ণমান ৫- এর মধ্যে এ ফিডব্যাক হয়। উভয়পক্ষ ফিডব্যাক দিলেই কেবল একজন অপরজনেরটা দেখতে পাবেন। ভালো ফিডব্যাক পেলে পরবর্তীকালে বেশি কাজ পেতে সুবিধা হয়। বাজে ফিডব্যাক পেলে সেটি মুছে ফেলতে পারবেন।
আপনি যদি বায়ারের পেমেন্ট ফেরত দিয়ে দেন, তাহলে আপনার প্রোফাইলে ওই বাজে ফিডব্যাক আর দেখা যাবে না। নোটিফিকেশন পেজে 'গিভ রিফান্ড'- এ ক্লিক করে আপনি বায়ারকে তার পেমেন্ট ফেরত দিয়ে দিতে পারবেন। বায়ার আপনাকে পেমেন্ট দেওয়ার পর সেই পেমেন্ট এক সপ্তাহের মতো সময় পেন্ডিং থেকে তারপর আপনার আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। আপনার বর্তমানে ব্যালান্স কত আছে এবং পেন্ডিংয়ে কত আছে, সেটি জানার জন্য 'ট্রানজেকশন হিস্টরি'-এ ক্লিক করুন।
আপওয়ার্কে সফল হওয়ার টিপস
প্রফেশনাল এবং পরিপূর্ণ প্রোফাইল
- ১. প্রোফাইলের ছবি হিসেবে হাসি-খুশি স্পষ্ট চেহারার নিজের ছবি ব্যবহার করতে হবে।
- ২. ওভারভিউয়ে নিজের দক্ষতার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিন্তু যেকোনো বায়ারকে আকর্ষণ করার মতো কিছু লিখতে হবে।
- ৩. আগের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দরভাবে বর্ণনাসহকারে লিখতে হবে।
- ৪. স্কিল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ভালো নম্বর অর্জন করতে হবে।
বিড করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়
১. কোনো চাকরির পোস্টের ১০ মিনিটের মধ্যে বিড করতে হবে।
২. যে কাজগুলো ভালোভাবে করা সম্ভব শুধু সেই ধরনের কাজেই বিড করা।
৩. সুন্দর কভার লেটার লিখে বিড করতে হবে।
কভার লেটারের মাধ্যমে বায়ারকে আকর্ষণ
কভার লেটারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। তাই এটি অন্য কারও কাছ থেকে কপি করা যাবে না, এমনকি নিজের অন্য কোনো কভার লেটারেরও কপি হতে পারবে না। কভার লেটার দিয়েই প্রথমে বায়ার আপনার ব্যাপারে ধারণা নেবেন। এ জন্য কভার লেটার হতে হবে মৌলিক ও সাবলীল ভাষায়।
কভার লেটারে বায়ারকে যে বিষয়গুলো বোঝাতে হবে
- ১. বায়ার কাজটির যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
- ২. কাজটি আপনি কীভাবে করতে চাচ্ছেন।
- ৩. কাজটি আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা না।
- ৪. নিজের বেশি বেশি গুণগান গাওয়ার চেয়ে আগে করা একই ধরনের কাজের প্রমাণ শেয়ার করুন।
আপওয়ার্ক থেকে টাকা উত্তোলন পদ্ধতি
আপওয়ার্ক থেকে বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি উপায়ে টাকা ওঠানো যায়। বাংলাদেশিদের জন্য আপওয়ার্ক 'লোকাল ফান্ড ট্রান্সফার' নামে এক বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে। আপনার যদি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে লোকাল ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে সরাসরি সেই অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি
প্রথম ট্রান্সফারে কোনো ধরনের সার্ভিস ফি কাটবে না। পরবর্তী প্রতি ট্রান্সফারে ৪ দশমিক ৯৯ ডলার করে কাটবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে পাইওনিয়ার ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে আয় করা অর্থ সরাসরি এটিএম বুথের মাধ্যমে ওঠানো যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি ট্রান্সফারে দুই ডলার করে কাটবে। তৃতীয় মাধ্যমটি হচ্ছে স্ক্রিল। স্ক্রিলকার্ড দিয়ে সবচেয়ে স্বল্প খরচে অর্থাৎ প্রতি লেনদেনে এক ডলার খরচ করে আপওয়ার্ক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়।
আশা করি মার্কেট প্লেস ছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায় এবং ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্ক এ সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের অনেক উপকার হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম মত ফলো করুন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।