স্বাধীন সম্মতির অবর্তমানে কি কোন দত্তকগ্রহণ বৈধ হইতে পারে

স্ত্রীর স্বামীর একবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা পালে পূর্ণ পূর্ণ দত্তক নিতে পারেন তবে একটি দত্তকীয় জীবদ্দশায় আরেকবার দত্তক নিতে পারবে না। যেমন স্বামী প্রদত্ত ক্ষমতা বলে স্ত্রী একবার দত্তক নিলেন। 
স্বাধীন সম্মতির অবর্তমানে কি কোন দত্তকগ্রহণ বৈধ হইতে পারে?
সে অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেল। স্ত্রী আবারও দত্তক নিতে পারবেন। দত্তকের উদ্দেশ্য হল স্বামীর আত্মার কল্যাণ সাধন। এ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য বিধবা স্বামী প্রদত্ত ক্ষমতায় প্রয়োজনবোধে একাধিকবার দত্তক নিতে পারেন।

অসতী বিধবা কি দত্তক গ্রহণ করতে পারে? [Can an unchaste widow adopt?]


হিন্দু আইনের বিধান মোতাবেক, কোন বিধবা অসতী অবস্থায় থাকলে সে দত্তক গ্রহণ করতে পারেনা। তাই, হিন্দু আইনের সকল মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ইহা একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে যে, কোন বিধবা অসতী হলে তারা দত্তর নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পাবে।

কন্যাকে কি দত্তক গ্রহণ করা যায়? [Can a daughter be taken in adoption?]


হিন্দু আইনের বিধান অনুযায়ী দত্তকী ব্যক্তিকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। তাই, স্বাভাবিকভাবে কোন কন্যাকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু ১৯৫৬ সালে Hindu Adoption and Maintenance Act পাশ হওয়ার পর ভারতীয় দত্তক আইনে কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। তাই, এই আইন অনুযায়ী কন্যা, পৌত্রি বা প্রপৌত্রি না থাকলে একজন মেয়েকেও দত্তক হিসাবে গ্রহণ করা যায়। কিন্তু এই আইন বাংলাদেশের হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে।

ভাগিনেয়কে কি দত্তকরূপে গ্রহণ করা যায়? [Can a sister's son be adopted?]


হিন্দু Adoption সম্পর্কীয় আইনের ইহা একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি যে, দত্তকী পুত্র এমন মায়ের সন্তান হবে না, যাকে দত্তক গ্রহণকারী পিতা আইনসঙ্গতভাবে বিবাহ করতে পারেনা। তাই, এইদিক দিয়া বিচার বিবেচনা করলে ভাগিরেয় অর্থাৎ বোনের ছেলেকে দত্তক নেওয়া যায় না। তবে এই নিয়ম উচ্চ তিন বর্ণের হিন্দুদের উপর প্রযোজ্য হয়ে থাকে; শুদ্রদের বেলায় এটা প্রযোজ্য নহে। রাজকুমার বনাম বিশ্বেশ্বর (1884) নামক মামলায় এই নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

অনাথকে কি দত্তক নেওয়া যায়? [Can an orphan be adopted?]


হিন্দু আইনে এটা একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি যে, একমাত্র পিতা এবং মাতাই দত্তক দেওয়ার অধিকারী। এমনকি পিতার জীবিতকালে মাতা তার পুত্রেক পিতার অনুমতি ব্যতিত দত্তক দিতে পারেন না। 'অনাথ' অর্থ যার পিতা-মাতা নাই। তাই, যার পিতা-মাতা নাই, তাকে দত্তক দেওয়ার মত কোন আইনসঙ্গত অভিভাবক না থাকায় অনাথকে কেহ দত্তক নিতে পারে না।

স্বাধীন সম্মতির অবর্তমানে কি কোন দত্তকগ্রহণ বৈধ হইতে পারে?


স্বাধীন সম্মতি বলতে কোন প্রকার ভয়-ভীতি বা প্রভাব মুক্ত সম্মতি। দত্তকদাতার অর্থাৎ দত্তকীর পিতামাতার স্বাধীন সম্মতি থাকতে হবে। দত্তক প্রদান ও দত্তক গ্রহণ এক পবিত্র অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান স্বেচ্ছায়, অন্যের বিনা প্ররোচনায় এবং সুস্থ শরীরের করতে হবে। অন্যথায় তাহা শাস্ত্রসম্মত ও বৈধ হবে না। এটা বাতিলযোগ্য।

একমাত্র পুত্রকে কি দত্তক দেওয়া যায়? [Can an only son be adopted?]


একমাত্র পুত্রকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ বা দত্তক দেওয়া যায় কিনা সেই সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। যেমন-
  • (১) বশিষ্ট মনে করেন যে, পিতৃ-বংশের ধারা অব্যহত রাখবার জন্য একমাত্র পুত্রকে দত্তক দেওয়া যায় না।
  • (২) মুনিবর যৌনকের মতে, কোন পিতার একমাত্র সন্তানকে দত্তক দেওয়া উচিত নয়।
  • (৩) ভাষ্যকার বুদ্ধনার্স একইভাবে বৈশিষ্ট ও যৌনকের মতামত সমর্থন করেন।
  • (৪) একইভাবে ১৮৬৮ সালে উপেন্দ্রলাল বনাম রাণী প্রসন্ন মামলায় কলিকাতা হাইকোর্টে একমাত্র পুত্রকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ বা প্রদান আইনতঃ বৈধ্য নয় বলে রায় প্রদান করেন।
  • (৫) সর্বোপরি, হিন্দু শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী "For a sonless man, there is no heaven" অর্থাৎ পুত্রহীনদের স্বর্গে কোন স্থান নাই। আর সেই কারণেই অর্থাৎ ধর্মীয় কারণেই (adoption system) প্রবর্তিত হয়েছে। সতরাং কেহ একমাত্র পুত্রকে অন্যের নিকট দত্তক দিলে সে নিজেই সন্তানহীন হয়ে পড়ে। তাই, কেহ তার একমাত্র পুত্রকে দত্তক দিতে পারে না।
কিন্তু, একমাত্র পুত্রকেও দত্তক গ্রহণ বা প্রদান করা যায়, সেই সম্পর্কে Privy council শ্রীবালুসু বনাম শ্রী বালুসু মামলায় (1899) সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এই মামলায় Privy council সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, একমাত্র পুত্রকে দত্তক গ্রহণ বা প্রদান করা আইনসঙ্গত ও বৈধ। এই সম্পর্কে মুনিঋষিগণের অভিমত সম্পর্কে প্রিভি কাউন্সিল মন্তব্য করেন যে, তাহাদের মধ্যে সরাসরিভাবে কেহ একমাত্র পুত্রকে দত্তক গ্রহণ বা প্রদান করা যাবে না বলে নিষেধ করেন নাই। তাদের আবেদন ছিল নৈতিক- সরাসরি নাকচ বা বাতিলের আদেশ নয়।

সুতরাং Privy Council শ্রীবালুসু বনাম শ্রী বালুসু মামলার রায়ের মাধ্যমে সকল মতভেদের চির অবসান ঘটায় ঘোষণা করেন যে, "An only son can be adopted” অর্থাৎ একমাত্র পুত্রকেও দত্তক গ্রহণ বা প্রদান করা যাতে পারে।

বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা


একজন বিধবার দত্তক গ্রহণ বা প্রদানের জন স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। পণ্ডিতরা মনে করেন দত্তক গ্রহণের কাজটি স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। পণ্ডিতরা মনে করে দত্ত গ্রহণের কাজটি স্বামীর অনুমতি
ছাড়া যদি সম্ভব না-ই হয় তাহা হলে ইহার অর্থ দাঁড়ায় বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমত নাই। অন্য শ্রেণীর পণ্ডিতরা মনে করেন যে, দত্তক গ্রহণের উদ্দেশ্য হইল মৃত স্বামীর আত্মার শান্তি বা কল্যাণ। সে কল্যাণের জন্য স্বামী যদি নিষেধ করে গেয় না থাকেন নিগূঢ় উদ্দেশ্য তাহা রক্ষার্থে বিধবা দত্তক গ্রহণ করতে পারবে। বিধবার দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি মতামত নিম্নে বর্ণিত হইল।
  • ক) বাংলাদেশ ও বেনারস মতপন্থীদের মতেঃ স্বামী বাঁচিয়া থাকতে অনুমতি দিয়ে গেলে বিধবা স্বামীর জন্য দত্তক নিতে পারেন, নিজের জন্য নয়।
  • খ) বোম্বে ও মাদ্রাজ মতপন্থীদের মতেঃ কিছু শর্ত সাপেক্ষে স্বামীর জন্য দত্তক নিতে পারেন।
  • গ) মিথিলা মতপন্থীদের মতে: কোন অবস্থাতেই দত্তক নিতে পারেন না। স্বামী পূর্বে অনুমতি দিয়ে গেলেও না।
স্বামী স্ত্রীকে দত্তক গ্রহণের জন্য যে অনুমতি দিয়ে থাকেন তাকে মৌখিক, লিখিত কিংবা উইলের মাধ্যমে হতে পারে। লিখিত অনুমতি হলে আবার অবশ্যই রেজিষ্ট্রি হতে হবে। অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে কোন শর্ত দিয়ে গেলে সে শর্ত প্রতিপালিত হবে, অন্যথায় দত্তক গ্রহণ অবৈধ হবে। বিধবা অসৎ বা অনৈতিক জীবন যাপন করলে দত্তক নিতে পারিবেন না। 

পুনরায় স্বামী গ্রহণও দত্তক গ্রহণের অন্তরায় হবে। তবে আনুষ্ঠানিক প্রায়শ্চিত করলে বিধবা আবার দত্তক নিতে পারবেন। দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা বিধবাকে এককভাবে দিতে হবে। কারো সাথে এই ক্ষমতা যৌথভাবে বিধবাকে দেওয়া যাবে না। কারো সাথে যৌথভাবে দত্তক নিলে ঐ প্রকার দত্তক আইনত অবৈধ। 

তবে নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করে দত্তক নিতে হবে- এইভাবে স্বামী বিধবা স্ত্রীকে ক্ষমতা দিয়া গেলে ঐ শর্ত বা নির্দেশ অবৈধ নয়। এইক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির সাথে বিধবার পরামর্শ করা স্বেচ্ছাধীন ব্যাপার। কিন্তু স্বামী ঐরূপ নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে পরামর্শ গ্রহণ যদি আবশ্যক শর্ত হিসাবে দিয়ে থাকেন তবে বিধবা ঐরূপ পরামর্শ ছাড়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবেন না। 

শর্ত অমান্য করলে দত্তক গ্রহণও অবৈধ হবে। দত্তক নেওয়ার যে শর্ত আরোপিত হয় তাহা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। ধরা যাক, স্বামী উইলে বলিল যে, সন্তান ছাড়া তাহার মৃত্যু হলে স্ত্রী দত্তক নিতে পারবে। স্বামী পরে ১টি কন্যা রাখে মারা গেল। এই অবস্থায় বিধবার কোন পুত্র না থাকলেও দত্তক নিতে পারবেন না। 

কারণ এতে উইলে আরোপিত শর্তের খেলাপ হবে। মৃত ব্যক্তির একের বেশি স্ত্রী থাকলে কেবল সেখানেই যৌথভাবে দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা স্বামী দিয়ে যাতে পারেন। একাধিক বিধবাদের একজনকে দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হলে সে অন্য বিধবাদের সাথে পরামর্শ করে দত্তক নিতে বাধ্য নয়। প্রথমা স্ত্রীকে দত্তক নেওয়ার প্রাথমিক ক্ষমতা দেওয়া হলে এবং তার অসম্মতিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ক্ষমতা দেওয়া থাকলে প্রথমা স্ত্রী দত্তক নিতে অসম্মতি জ্ঞাপন না করা পর্যন্ত দ্বিতীয়া স্ত্রী দত্তক গ্রহণের অধিকারী নয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url